ঘটনাটি গত বছরের। শিশুর আঁকা একটি ছবি ও তার জের ধরে এক বছর পরে যে পরিমাণ পানি ঘোলা হল, তার জন্য বেজায় বিব্রত সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
Advertisement
অতি উৎসাহীদের কারণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে এর আগেও বহুবার বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু এবারে যে সমালোচনার ঝড় সামলাতে হচ্ছে, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না দলটি।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জ্যেষ্ঠ এই নেতার সঙ্গে। বলেন, ‘খুবই বিরক্ত। দলও বিব্রত।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর আঁকা ওই ছবিটি আমি দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে বিকৃতি ঘটছে বলে মনে হয়নি। যে কেউ দেখলেই ছবিটির প্রশংসা করবে। ছোট্ট শিশু এমন একটি ছবি আঁকার সাহস করেছে, সেটাই তো আমাদের কাছে বড় পাওয়া। অতি উৎসাহী লোকজনের কারণে মাঝে-মধ্যেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় আমাদের। এই ঘটনাও আমাদের বিব্রত করেছে। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীও।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘একটি মামলার ঘটনায় গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে যে সমালোচনা সইতে হচ্ছে, তা কারোই কাছেই সুখের না। অমন মামলাবাজ নেতাদের কারণেই দলকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।’
একই বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সুবিধাবাদী এসব নেতা দলে ভেড়েন সুবিধা নেয়ার জন্যই। একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ওই নেতা মামলাটি করেছেন, শুধু নিজেকে প্রকাশ জন্যই। বঙ্গবন্ধু এবং দলের প্রতি আনুগত্য থাকলে কেউ এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘এমন বিব্রতকর ঘটনার জন্য ওই নেতার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।
ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও।’
Advertisement
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বললেন, ক্লাস ফাইভের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এই অফিসার সুন্দর একটি কাজ করেছেন। এবং সেখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে, সেটি আমার সামনেই আছে, আপনারা দেখতে পারেন। এবং এই ছবিটিতে বিকৃত করার মতো কিছু করা হয়নি। এটি রীতিমতো পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এই অফিসারটি রীতিমতো পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। আর সেখানে উল্টো আমরা তার (ইউএনও) সঙ্গে এই করেছি, এই বলে প্রধানমন্ত্রী তিরস্কার করলেন। বললেন, এটি রীতিমতো নিন্দনীয়।’
এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দলটির সমমনাদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও।
গাজী তারেক সালমান বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকাকালে গত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেন।
এ ঘটনায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ চলতি বছরের ৭ জুন বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারেক সালমানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেন।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তারেক সালমানকে বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি করা হয়। গত বুধবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করেন তারেক সালমান।
আদালত প্রথমে তা নামঞ্জুর করে ইউএনওকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর দুই ঘণ্টা পর তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়। জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
এএসএস/এসআর/পিআর