বিশেষ প্রতিবেদন

ব্যবসাই বন্ধ, কোরবানির চামড়া দিয়ে কী করব?

দেশের রফতানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ খাত ট্যানারিশিল্প। শীর্ষে থাকা তৈরি পোশাক খাতের কাছাকাছি একমাত্র এ শিল্পই যেতে পারে। কিন্তু বর্তমানে এ খাতে চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রায় তিন মাস ধরে ট্যানারির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মন্থর হয়ে গেছে রফতানিও। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের চামড়াশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ‘কোহিনূর ট্যানার্স লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহীন আহমেদ।

Advertisement

জাগো নিউজ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের ট্যানারিশিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যত অবস্থা সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম।  

জাগো নিউজ : চামড়াশিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন?

মো. শাহীন আহমেদ : সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর, হাজারীবাগে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ না থাকায় চামড়াশিল্পের ব্যবসা এক-চতুর্থাংশ কমেছে। রফতানি নেমেছে অর্ধেকে। 

Advertisement

এ অবস্থায় বর্তমান চামড়াশিল্প নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ব্যবসা প্রায় বন্ধ। সবকিছু এলোমেলো থাকায় কারখানার আগের কাজ এখনও শেষ হয়নি। 

জাগো নিউজ : আসছে কোরবানি ঈদ। চামড়া সংগ্রহের বিষয়ে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন? 

মো. শাহীন আহমেদ : ট্যানারির অর্ধেকের বেশি পশুর চামড়া সংগ্রহ হয় কোরবানি ঈদের সময়। এ বছর আমাদের সবকিছুই এলোমেলো হয়ে আছে। কারখানা বন্ধ, অন্যদিকে সাভারে যারা গেছেন অনেকে ঠিক মতো গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন না। 

সাভারে স্থানান্তর হওয়া কারখানাগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে। যে ক’টি চলছে তা আগের মাল (চামড়া) দিয়ে। গত কয়েক মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। কোরবানির চামড়া দিয়ে কী করব? তাই এবার চামড়া কিনব কি কিনব না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। 

Advertisement

জাগো নিউজ : সাভারের চামড়া শিল্পনগরী কোরবানির চামড়া সংগ্রহে কতটুকু প্রস্তুত?

মো. শাহীন আহমেদ : সাভারের শিল্পনগরীতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫৪টির মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ট্যানারি চালু হয়েছে। যার বেশিরভাগই শুধু কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রথম ধাপের (ওয়েট ব্লু) কাজ করছে। কিন্তু পরবর্তী ধাপ যেমন- ক্রাশড লেদার ও ফিনিশড লেদার তৈরির সুবিধা নেই চালু হওয়া বেশিরবাগ ট্যানারির। এ অবস্থায় আমরা চামড়া কিনব কিভাবে? কারণ চামড়া কিনে ফেলে রাখলে চলবে না। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সংগ্রহ করতে হয়। অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ, চামড়া কিনে কী করব?

শুধু কারখানা বন্ধই নয় আমাদের অর্থ সংকটও রয়েছে। সাভারে কারখানার ভবন নির্মাণ, নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি, মেশিন স্থানান্তরে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ উদ্যোক্তাই অর্থ সংকটে রয়েছেন। 

এখন আমাদের আয়ের পথ বন্ধ। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, ব্যাংক ঋণের সুদ ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই একদিকে অর্থ সংকট অন্যদিকে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার কারণে এবার কোরবানিতে চামড় সংগ্রহ কঠিন হবে।

জাগো নিউজ : এ অবস্থায় চামড়াশিল্পের ভবিষ্যত কী? 

মো. শাহীন আহমেদ : একদিকে কারখানা বন্ধ, অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ের ফলে গুণতে হচ্ছে জরিমানা। সব মিলিয়ে কঠিন অবস্থায় আছি। গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে সাভারে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েই সরকারের কাজ শেষ। অন্যদিকে আমাদের এ চামড়াশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

বিদেশি ক্রেতাদের সময় মতো তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবাহ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ট্যানারি স্থানান্তার এবং হাজারীবাগে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিছিন্ন করায় নতুন করে বিদেশি অর্ডার নিতেও পারছি না। 

জাগো নিউজ : বর্তমান পরিস্থিতিতে এ শিল্পে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কত সময় লাগতে পারে? 

মো. শাহীন আহমেদ : দেশের চামড়াশিল্প অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পণ্য রফতানি করে। রফতানি আয়ে দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এ খাত। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় এ শিল্প কঠিন সময় পার করছে। এ বছর চামড়া খাতের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। মার্চ-এপ্রিলে আমাদের যেসব পণ্য মজুদ ছিল তা রফতানি করেছি। কিন্তু গত তিন মাস বেশিরভাগ ট্যানারির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে আগামীতে চামড়া খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়াবে। 

সময় মতো পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় আগের প্রায় হাজার কোটি টাকার রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার পথে। ক্রেতারা এখন অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক করছেন। যেসব ক্রেতা চলে যাচ্ছেন তাদের পুনরায় ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে চামড়াশিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে বা হবে তা পুষিয়ে নিতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে।

এসআই/এমএআর/পিআর