অর্থের অভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী আরিফের লেখাপড়া যখন অনেকটা বন্ধ হবার উপক্রম তখনই তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন জেলার দাউদকান্দি উপজেলা প্রশাসন।
Advertisement
মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আরিফের লেখাপড়ার খরচের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন। ঢাবির ছাত্র আরিফ দাউদকান্দি উপজেলার ২২নং পশ্চিম মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের শায়েস্তানগর গ্রামের বাসিন্দা।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন। বিশেষ অতিথি ছিলেন দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) রনজন কুমার ঘোষ, দাউদকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. খোরশেদ আলম, বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের নিউজ রুম এডিটর বাশার খান, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. শিবলীজ্জামান ও বিআরডিবি কর্মকর্তা টিপু সুলতান।
উল্লেখ্য, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আরিফ হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ২২নং পশ্চিম মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের শায়েস্তানগর গ্রামে। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জনকারী মেধাবী আরিফ বর্তমানে ঢাবির দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাবা এ পর্যন্ত অনেক কষ্টে আরিফের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন।
Advertisement
কিছুদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত কারণে আরিফের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে আরিফের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যেতে পারছিলেন না তার বাবা। এতে মেধাবী আরিফের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এরপর ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব গ্রেটার দাউদকান্দি’র (ডুসাদ) মাধ্যমে সমাজকল্যাণমূলক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ভিত্তিক সংগঠন ‘মাটি’র সঙ্গে যোগাযোগ হয় আরিফের।
পরে ‘মাটি’র কর্তৃপক্ষ দাউদকান্দি উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আরিফের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন। এখন থেকে দাউদকান্দি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরিফকে প্রতি মাসে লেখাপড়া খরচ বাবদ ৩ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। তার মাস্টার্স পাস করা পর্যন্ত এই সহযোগিতায় অব্যাহত থাকবে।
পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বই কেনা ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ এককালীন নগদ টাকাও প্রদান করা হবে। প্রাথমিকভাবে অনুষ্ঠানে বই কেনা বাবদ নগদ ১০ হাজার ও আগামী ৬ মাসের খরচ ১৮ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মেধাবী আরিফ বলেন, ‘চোখে আলো নেই। তবুও এটা আমার লেখাপড়ার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। নিজের আত্মবিশ্বাস ও আর বাবার সহযোগিতায় এতদূর এসেছি। কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমার লেখাপড়া অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে মনে হচ্ছিল। দাউদকান্দি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আমি যেন আবার দেখতে শুরু করেছি। তাই উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
Advertisement
অনুষ্ঠানে দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার যৌথভাবে বলেন, আজকের পর থেকে অর্থের অভাবে দাউদকান্দির কোনো শিক্ষার্থীর লেখা-পড়া বন্ধ হবে না। আমরা তার পাশে দাঁড়াবো।
কামাল উদ্দিন/এফএ/আরআইপি