প্রায় দেড়মাস হয়ে গেছে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে অবরোধ আরোপ করেছে সৌদি নেতৃত্বাধন জোট। ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা ও জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সমর্থন ও অর্থায়নের অভিযোগে এখন পর্যন্ত নয়টি দেশ দোহার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দেশটিকে বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্যে এবং নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য করার জন্য ওই অবরোধ।
Advertisement
সৌদি জোটের সেই উদ্দেশ্য কতোটা সফল হয়েছে? কাতার কী ধরনের সমস্যায় পড়েছে, কিংবা অবরোধের প্রাথমিক ধাক্কাটা তারা কতটাই বা কাটিয়ে উঠেছে?
প্রভাবশালী আমেরিকান দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতা ডেকলান ওয়ালশের মতে, কাতারের বিরুদ্ধে যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত তা খুব একটা কাজ করছে না।
তিনি আরও বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পর অবরোধের কারণে কাতারে প্রথমদিকে খাদ্যের সরবরাহে যে সমস্যা হয়েছিল, তুরস্ক ও ইরানের সহায়তায় তা অনেকটাই কেটে গেছে। কাতারের বিমানবন্দরের ব্যস্ততা কমে গেছে, শেয়ার মার্কেটে ১০ শতাংশ দর পড়ে গেলেও তাদের গ্যাস রফতানির ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি।
Advertisement
কাতারের নির্মাণ শিল্প এখন চলছে নানা রকম বিকল্প উৎসের ওপর ভর করে। শিপিং এর খরচও বেড়ে গেছে। তবে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য এখন আমিরাতের পরিবর্তে ওমানের বন্দর ব্যবহার করছে কাতার।
ওয়ালশ অারও বলেন, সংকট আর গভীর হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও গত কয়েক দিনে মধ্যপ্রাচ্য সফর করে নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে গেছেন। কিন্তু তাতে তেমন কোনো ফল আসেনি।
কাতারের প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিযোগ, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দোহা কোনো লড়াই করছে না। বরং তাদের রাজধানী দোহা থেকেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর অর্থায়ন হচ্ছে।
ওয়ালশ মনে করেন, কাতার যে তাদের দেশকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মত-পথের লোকদের মুক্তভাবে বিচরণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে, এটাই তার প্রতিবেশীদের ক্রোধের কারণ।
Advertisement
তার ভাষায়, কাতার শহরে আপনি দেখবেন বিচিত্র সব বিপরীত মত-পথের লোক বা প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছে। এখানে আছে নামকরা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা; আবার এখানেই তালেবানের অনেক কর্মকর্তা তাদের পরিবার নিয়ে থাকছে।
তালেবানের লোকেরা যে আফগান রেস্তোরাঁতে খাওয়া-দাওয়া করে; তার কয়েক মাইল দূরেই আছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। যেখানে নয় হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে। সেখান থেকে নিয়মিতই যুদ্ধবিমান উড়ে যাচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, বা আফগানিস্তানে; ইসলামিক স্টেট বা তালেবানের ওপর বোমা ফেলতে।
ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস এই কাতার শহরেরই একটি বিলাসবহুল বাড়ি থেকে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তাদের সাবেক নেতা খালেদ মিশাল এখানেই থাকেন। তার কাছেই আবার ব্রিটিশ দূতাবাস অবস্থিত।
এ শহরের কাছে ঢাকা গগনচুম্বী টাওয়ার আর বিলাসবহুল ভিলাগুলোতে যেমন ধনী কাতারিরা থাকে, তেমনি এ শহরে থাকে সিরিয়া থেকে নির্বাসিতরা, সুদানের যোদ্ধা কমান্ডাররা, কিংবা লিবিয়ান ইসলামপন্থীরা।
কাতারে একটি ইসরায়েলি বাণিজ্য অফিসও ছিল; যদিও এখন তা বন্ধ। কিন্তু কাতার আশ্বাস দিয়েছে সেখানে যে বিশ্বকাপ ফুটবল হবে তাতে ইসরায়েলকে খেলতে দেয়া হবে।
এমনকি সৌদি আরব, আমিরাত মিসর বা বাহরাইনের ভিন্ন মতাবলম্বীরাও এসে ঘাঁটি গেড়েছে কাতারে। তাদের প্রায়ই আল-জাজিরা টিভিতে কথা বলতেও দেখা যায়।
এ কারণে এই দেশগুলো কাতারের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। কাতারকে তারা যে ১৩ দফা দিয়েছে তার একটি হল আল-জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দিতে হবে।
কাতার এসব দাবি এখন পর্যন্ত মেনে নেবার আভাসও দেয়নি। বরং তাদের খোলা দুয়ার এবং সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলার নীতিকে তারা এই সংকটের মোকাবিলায় ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছে।
কোনো পক্ষই কাতারকে পুরোপুরি ত্যাগ করে অন্য পক্ষের সঙ্গে ভিড়তে চাইছে না। মাঝখানে ইরানের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটেছে। বিবিসি বাংলা।
কেএ/এমএস