শিশু সোহাগী (১০)। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের বিয়ে হয় অন্যত্র। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গৃহকর্মী হিসেবে রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডের একটি বাসায় ঠাঁই হয়।
Advertisement
গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় তার ওপর শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সোহাগীকে মরধর করত তারা। সোহাগীর শরীরে গরম পানি, ভাতের গরম মাড় ঢেলে নির্যাতন করা হতো। এমনকি বিষাক্ত হারপিক ঢেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঝালসে দেয়া হতো।
তার ওপর নির্মম নির্যাতনের খবর শুনে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর দিলু রোডের ২৭/এ নম্বর বাসা থেকে গুরুতর অবস্থায় সোহাগীকে উদ্ধার করে র্যাব-৩ এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সোলায়মান। এ সময় বাসার মালিক মশিউর রহমান ও তার স্ত্রী কাজী মাহরুনা রহমান লিমাকে আটক করে রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩ এর ৪ (৩) ধারায় একটি মামলা করেন র্যাবের ওই ওয়ারেন্ট অফিসার।
২০১০ সালের ২২ নভেম্বর দুজনের নামে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মামলার বাদীসহ পাঁচজন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন।
Advertisement
পরবর্তী সময়ে সাক্ষীরা নিয়মিত আদালতে সাক্ষ্যপ্রদান করতে না আসায় সাত বছর ধরে মামলাটি ঝুলে আছে।
২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগে ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন রাজীব ও তার স্ত্রী জেসমিন জাহান ওরফে নিত্য শাহাদাতের বিরুদ্ধে সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শাহাদাত হোসেন ও তার স্ত্রীকে বেকসুর খালাস দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক তানজিলা ইসমাইল।
নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসা হওয়ায় এবং ভিকটিম নির্যাতনের বিষয়টি আদালতে অস্বীকার করায় আসামিরা বেকসুর খালাস পান। যদিও এর আগে শিশু গৃহকর্মী হ্যাপি আদালতে ২২ ধারায় তার ওপর নির্মম নির্যাতনের কাহিনি বর্ণনা করেন।
Advertisement
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে গৃহকর্মী নির্যাতনের ৩০ শতাংশ মামলাই সাক্ষী না আসায় ঝুলে রয়েছে। আর শাহাদাত দম্পতির মতো ৭০ শতাংশ মামলা উভয়পক্ষ আপস-মীমাংসার মাধ্যমে সুরাহা করছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির কেস ম্যানেজার ফাহমিদা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, গেল তিন বছরে আমাদের কাছে গৃহকর্মী নির্যাতনের প্রায় ২৫টি মামলা এসেছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মামলা উভয়পক্ষ আপস-মীমাংসা করে নেয়। ফলে আসামিরা খালাস পেয়ে যান। অন্যদিকে ৩০ শতাংশ মামলায় সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় তা ঝুলে রয়েছে।
জেএ/এমএআর/এমএস