ঈর্ষণীয় বেতন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিলাসবহুল জীবন। বিশ্বের সেরা আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি। আর সেই সংস্থাটি যদি হয় ‘গুগল’ তবে তো কোনও কথাই নেই। কয়েক বছর চাকরিতে লেগে থাকতে পারলেই উঁচু পদ আর কোটি টাকার হাতছানি... এ সব ছেড়ে যদি কেউ সিঙ্গারা বেচার ভাবনায় মশগুল হন, তবে সেই ভাবনাকে ‘পাগলাটে’ বলার কোনও জায়গা নেই। কারণ, এই ব্যবসা করেই ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন মুনাফ কাপাদিয়া। ঝুঁকিটা তিনি নিয়েই ফেলেছিলেন।
Advertisement
গরম ধোঁয়া ওঠা সোনালি খোল। তার ভিতর হরেক কিসিমের মশলায় মাখামাখি তুলতুলে মাটনের পুর। যার বাহারি নাম ‘স্মোকড মাটন কিমা সমুচা’। চলতি বাংলায় যাকে বলে ‘মাটন সিঙ্গারা’। এই সিঙ্গারা বিক্রির ব্যবসা শুরু করার জন্যই টেক জায়ান্ট গুগলের আরামদায়ক চাকরি ছেড়েছিলেন ভারতের মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ২৯ বছরের মুনাফ কাপাদিয়া।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ২০১৫ সালে তিনি ‘দ্য বোহরি কিচেন’ নামে একটি রেস্তোরাঁ চালু করেন। মূলধন মায়ের পরামর্শ। মাত্র দু’বছরের মধ্যে মুনাফের ‘দ্য বোহরি কিচেন’ হয়ে উঠে মুম্বাইয়ের অন্যতম আলোচিত ফুড ডেস্টিনেশন। বছরে তার রেস্তোরাঁর আয় ৫০ লাখ টাকা।
মুনাফের ব্যবসা শুরুর গল্প
Advertisement
মুম্বাইয়ের নার্সি মনজি থেকে এমবিএ করে বছরখানেক দেশেই চাকরি করেছিলেন তিনি। এর পর ডাক এল গুগল থেকে। আমেরিকায় কয়েক বছর লেগে রইলেন মুনাফ। কিন্তু সাহেবদের দেশে মন বসল না তার।
সব রকম প্রলোভন ছাপিয়ে মায়ের হাতের রান্না করা খাবারের জন্যে মুনাফের জিভ আনচান করত। সঙ্গে স্মৃতিতে ভর করে আসত বন্ধুদের আড্ডা। বন্ধুদের সঙ্গে দোকানে বসে চা-সিঙ্গারা খাওয়ার সময়টার কথা ভেবে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠত। অগত্যা বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে ঘরের ছেলে ফিরলেন ঘরে।
এ দিকে মুনাফের মা নাফিসারও একই অবস্থা। ছেলে বিদেশে। মাথায় সবসময় ঘুরত নানান চিন্তা। অবসরে ভরসা ছিল শুধুমাত্র টিভির রান্নার অনুষ্ঠান। তিনি নিজেও যে রান্না করতে ভীষণ ভালবাসেন তা জানতেন ছেলে।
আর তাই মায়ের হাতে তৈরি রান্না করা খাবার দিয়েই জার্নিটা শুরু করলেন মুনাফ। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠল ‘দ্য বোহরি কিচেন’। স্বপ্নের নগরী মুম্বাইয়ে বহু মানুষ আসেন কাজের সন্ধানে। নিজের বাড়ির খাবারকে মিস করেন অনেকেই। সেই ভাবনা থেকেই মুনাফ তার রেস্তোরাঁর ট্যাগলাইন দিয়ে ফেললেন ‘ঘর কা খানা’।
Advertisement
মুনাফের কিচেনের ‘মাটন সিঙ্গারা’য় তৃপ্ত হল সবার রসনা। বিখ্যাত তারকা থেকে ফাইভ স্টার হোটেলের কর্তৃপক্ষ, অনেকেই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন মুনাফের সিঙ্গারার। তবে শুধুমাত্র সিঙ্গারাই নয়। মা-ছেলে মিলে আরও বেশ কিছু খাবার যোগ করেছেন মেনুতে।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুনাফের রেস্তোরাঁর সামনে লেগে থাকে ভোজনরসিকদের লাইন। তার ইচ্ছে কয়েক বছরের মধ্যে মুনাফার অঙ্কটাকে বছরে পঞ্চাশ লক্ষ থেকে পাঁচ কোটিতে নিয়ে যাবেন তিনি। মুনাফ ‘টাইমস নাউ’কে বলেন, ‘সাফল্যের জন্য ঝুঁকি নিতে হয়।’
এখানেই থামছেন না মুনাফ। জার্নিটা সবে শুরু। আরও এগিয়ে যেতে চান অনেক অনেক দূর পর্যন্ত। তার ‘বোহরি কিচেন’কে ছড়িয়ে দিতে চান ভারতের সীমানা পেরিয়ে দেশের বাইরেও। ফোর্বস ম্যাগাজিন সম্প্রতি ‘আন্ডার থার্টি’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে মুনাফ কাপাদিয়ার নাম। আনন্দবাজার।
এসআইএস/জেআইএম