সিক্কিম সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনীর গোলায় ভারতীয় ১৫৮ সেনা নিহত হয়েছে বলে পাকিস্তানের প্রথম সারির একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সংবাদ প্রচার করেছে। পাকিস্তানি এই টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ‘ভিত্তিহীন, নোংরা ও অসৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ’ বলে ভারতীয় সেনা হতাহতের ওই খবর উড়িয়ে দিয়েছে।
Advertisement
একই সঙ্গে দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের কাছ থেকে এ ধরনের সংবাদ বিবেকবান কোনো মানুষ প্রত্যাশা করে না বলেও ওই মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন।
ভুটানের দোকলাম এলাকায় চীনের একটি সড়ক নির্মাণ ঘিরে চার সপ্তাহ ধরে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ভারতীয় ও চীনা সেনাবাহিনী। তবে দুই দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও দোকলামে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে চীন এবং ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
এদিকে দোকলামে সেনা হত্যার খবর ভারত প্রত্যাখ্যান করলেও পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেল দুনিয়া নিউজ তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে এখন পর্যন্ত ভিডিও প্রত্যাহার করে নেয়নি। চীনা সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে ভারতীয় ১৫৮ সেনা নিহতের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারেও দিয়েছে দুনিয়া নিউজ।
Advertisement
দুনিয়া নিউজ সোমবার চীনের চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনের বরাত দিয়ে দুই মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজে প্রচার করছে। এতে বলা হয়েছে, চীনের সেনারা শত্রুপক্ষের অবস্থানে রকেট লাঞ্চার, মেশিন গান এবং মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। এতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাঙ্কার উড়িয়ে গেছে।
পাকিস্তানি এই টেলিভিশন চ্যানেল সোমবার রাতে অপর এক প্রতিবেদনে জানায়, সোমবার চীনা সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গ্রেনেড নিয়ে দীর্ঘ মহড়া চালিয়েছে। সোমবারের এই মহড়া ভারতের প্রতি পরিষ্কার সতর্ক বার্তা।
চীন এবং ভারত সীমান্তের দুটি বৃহৎ এবং কয়েকটি ছোট ছোট ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে আসছে। মালিকানা প্রতিবেশি এ দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বিতর্ক চলছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৩৮০ বর্গমাইলের দুর্গম একটি এলাকা আছে; যা আকসাই চীন নামে পরিচিত। এছাড়া ম্যাকমোহন লাইনের কাছে দুটি বৃহৎ এলাকা নিয়েও চীন -ভারত দ্বন্দ্ব ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলছে।
উল্লেখ্য, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মির থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত চীন-ভারতের দীর্ঘ ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। এর মধ্যে সিকিমেই রয়েছে প্রায় ২২০ কিলোমিটার। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে চীনের সরকারি দৈনিক গ্লোবাল টাইমস এক প্রতিবেদনে বলছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের বিনিময়ে হলেও চীন তার সীমান্তের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।
Advertisement
সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ১৯৬২ সালে ভারত যা ছিল; ২০১৭ সালের ভারত তার চেয়ে ভিন্ন। ভারতীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চীনের সাংহাই মিউনিসিপ্যাল সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক ওয়াং দেহুয়া বলেন, ১৯৬২ সালের চীনও এখন ভিন্ন।
অরুণ জেটলি বলেছিলেন, তারা যদি আমাদের মনে করিয়ে দিতে চায়, ১৯৬২ সালের পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম এবং ২০১৭ সালের ভারতের অবস্থান আগের মতো নেই।
ওয়াং বলেন, ১৯৬২ সাল থেকেই চীনকে ভারত সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী মনে করে আসছে। যদিও দেশ দুটির মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল রয়েছে। যেমন, ব্যাপক জনগোষ্ঠী নিয়ে উভয় দেশই উন্নয়নশীল।
গ্লোবাল টাইমস বলছে, চীন এবং ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে; তা যদি যথাযথ উপায়ে মোকাবেলা করা না হয় তাহলে একটি যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সে রকম নাও ঘটতে পারে। চীন তার ভূখণ্ড ও সীমান্ত এলাকা রক্ষা করবে।
বেইজিংয়ের এই দৈনিক বলছে, ১৯৬২ সালে চীনা ভূখণ্ডে অতর্কিত ভারতীয় হামলার কারণে চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। এতে অন্তত ৭২২ চীনা সৈন্য ও ৪ হাজার ৩৮৩ ভারতীয় সৈন্যের প্রাণহানি ঘটে। সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসআইএস/পিআর