জাতীয়

‘প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন, এখন আমাকে সুস্থ করতেই হবে’

বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণি। ছয়দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি। সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে তবু হাঁটাচলার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখানে সেই ব্যবস্থাও নেই। বার্ন ইউনিটের কেবিনের ভেতর সারাদিন বাবা-মা আর বোনের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটে মুক্তার। মাঝে মাঝে বাম হাত দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।

Advertisement

মুক্তাকে ভাত খাইয়ে দেন তার মা। হাত চুলকানোর কাজটিও করেন তিনি। আর বাবার কাছে সব আবদার করে মুক্তা। মনের কথাগুলো বেশিরভাগ বাবাকেই বলে সে। দীর্ঘ ৮-৯ বছর ধরে চিকিৎসা চলছে মুক্তার। তবে কোনোটাতেই কাজ হয়নি। এবার চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা আশাবাদী মুক্তা নিজেই।

রোববার ঢামেক হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে মুক্তা তার বাবাকে বলছিল, ‘এখানে (ঢামেক) সবাই (ডাক্তাররা) যেভাবে যত্ন নিচ্ছে যদি আগে এমন ভালোভাবে আমাকে দেখত তাহলে ভালো হয়ে যেতাম।’

হাসিমুখে বাবাকে মুক্তা বলে, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন, এখন তো ডাক্তারদের আমাকে ভালো করতেই হবে।’

Advertisement

মুক্তার এমন কথা শুনে অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন। জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবারই প্রথম মুক্তা এবং আমরা তার চিকিৎসা নিয়ে খুব আশাবাদী হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, আমার এই মেয়ে খুব আদরের। মুক্তা প্রতি রাতে বিছানায় আমার ও তার মায়ের মাঝখানে ঘুমায়। আমরা দুজনের কেউই তাকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করি না। সে আমাদের খুব আদরের। তার চিকিৎসায় গত ১০ বছর ধরে ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আরও যা যা প্রয়োজন তাই করব।

মুক্তার শারীরিক অবস্থাঢামেকে আসার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপারেশনের আগে মুক্তাকে প্রস্তুত করতে হবে। তার দেহে দুই ব্যাগ রক্ত এবং এক ব্যাগ প্লাজমা দেয়ায় ইতোমধ্যে রক্তশূন্যতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। পুষ্টিহীনতার কারণে বয়সের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ খাবার (ডাবল ডায়েট) দেয়া হচ্ছে তাকে।

মুক্তার রক্ত নিয়ে কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে- ইউরিন টেস্ট, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রাফিসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মাংসের টেস্ট করানো বাকি। সোমবার সেই টেস্ট করানো হবে এবং তিনদিন পর এর রিপোর্ট দেয়া হবে।

Advertisement

ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা মুক্তাকে দেখে নিজ নিজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান দিয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন টেস্ট দিয়েছেন। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে। তবে চিকিৎসার মূল দায়িত্ব প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের। সোমবারের মধ্যে সব রিপোর্ট আসবে। এরপর বোর্ডের চিকিৎসকরা বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন।

ঢামেকের একজন চিকিৎসক জাগো নিউজকে জানান, এ পর্যন্ত মুক্তার যতগুলো টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া গেছে সবই সন্তোষজনক; তবে কয়েকটি রিপোর্টে প্রবলেম (সমস্যা) রয়েছে। হয় দীর্ঘদিন ধরে ভুল চিকিৎসা করিয়েছে অথবা সঠিক জায়গায় চিকিৎসা করাতে পারেনি।

এখন শরীর কেমন? হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা মুক্তার কাছে জানতে চাইলে সে বলে, ‘আগের চেয়ে ভালো। ডান হাতের ভেতর অনেক চুলকায়।’

সে জানায়, চুলকানোর কারণে গতকাল রাতে ঘুমাতে পারেনি।

কেবিনে যেভাবে সময় কাটে মুক্তারঢামেক কেবিনে কখনও বাবা-মা আর বোনের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটায় মুক্তা। রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, কেবিনে বেডের পাশেই ঘড়ি, ব্যান্ড, নেইলপলিশ, ব্রেসলেট আর লিপস্টিক নিয়ে জমজ বোন হিরামণির সঙ্গে বসে আছে মুক্তা।

হাতে ব্রেসলেট পরে বাবাকে দেখাচ্ছে সে। বাম হাত দিয়ে মাঝে মাঝে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মুক্তা। মোবাইল চাপতে চাপতে একপর্যায়ে ছয় বছর আগে নিজের বউ সেজে তোলা ছবিটি বের করে দিল মুক্তা। তখন তার হাতের অবস্থা অনেকটাই ভালো ছিল।

হাসপাতালে মুক্তার খোঁজ নিয়েছেন মুশফিকুর রহীমঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুক্তার শারীরিক খোঁজখবর নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। শনিবার ঢামেকের ঊর্ধ্বতন এক চিকিৎসকের কাছে ফোন দিয়ে মুক্তার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চান তিনি। কয়েক দিনের মধ্যে ঢামেকে গিয়ে মুক্তাকে দেখে আসবেন বলে কথা দেন মুশফিক।

এআর/বিএ/আরআইপি