চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নয় শিশুর মৃত্যু অজ্ঞাত রোগে নয়, হাম বা অ্যানকেফালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে- এমন ধারণা করছেন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত নমুনা মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফল আজ (রোববার) সন্ধ্যা নাগাদ পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
পরীক্ষার ফলাফল হাতে না আসা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সীতাকুণ্ডের শিশুরা ‘অজ্ঞাত’ নাকি অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে- এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন ল্যাবরেটরির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রোববার সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, যে সকল পরিবারের শিশু মারা গেছে এবং যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে রোগের ইতিহাস (জ্বর, কাশি, গায়ে ফুসকুড়ি ও শ্বাসকষ্ট) শুনে মনে হয়েছে তারা হাম কিংবা অ্যানকেফালাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে।
Advertisement
কেন এমনটা ধারণা করছেন- জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সীতাকুণ্ডের ওই ঘটনাস্থলসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। তারা এখনও ঝাড়ফুঁক, লতাপাতা ও কবিরাজি চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল।
সরকারিভাবে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) মাধ্যমে শিশুদের হাম, যক্ষ্মা ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের বিনামূল্যে টিকা দেয়া হলেও সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্য সোনাইছড়ি ওয়ার্ডের ত্রিপুরাপাড়া এলাকার শিশুরা টিকা গ্রহণ করে না বলে তথ্য পেয়েছেন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া শিশুরা পুষ্টিহীনতায়ও ভুগছিল বলে তারা জানতে পারেন।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, নয় শিশুর মৃত্যুসহ আরও অর্ধশতাধিক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ার পরও তারা প্রথমে হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি। স্থানীয় কিছু আধুনিকমনা তরুণ-তরুণীদের মাধ্যমে তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে।
এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নয় শিশুর মৃত্যু এবং কয়েকদিনে ৬৫ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে দুটি কমিটি গঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে ওই দুটি কমিটি গঠিত হয়।
Advertisement
আইইডিসিআর’র পক্ষ থেকেও পৃথক দুটি দল পাঠিয়ে নমুনা হিসেবে আক্রান্তদের রক্ত ও লালা সংগ্রহ করা হয়। প্রথম দফায় সংগৃহীত নমুনার পরীক্ষার ফলাফল রোববার সন্ধ্যা নাগাদ পাওয়া যেতে পারে বলে জানা গেছে।
সীতাকুণ্ডে নয় শিশুর মৃত্যুসহ অন্যান্য শিশুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআর পরিচালক ড. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় জাগো নিউজকে বলেন, তারা নমুনা পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ও ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত নানা তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করছেন। চূড়ান্তভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে মিডিয়াকে অবহিত করা হবে।
এর আগে তিনি ধারণাপ্রসূত কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
এমইউ/এমএআর/পিআর