খেলাধুলা

মুশফিক ইস্যুতে অনিবার্য শাস্তির মুখে বরিশাল বুলসের ভুলু

তিনি বোর্ড পরিচালক। বর্তমান বোর্ডের সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশ যে ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ক্রীড়াশক্তির, সেই আবাহনী লিমিটেডের অন্যতম শীর্ষ কর্তা। দীর্ঘ দিন আবাহনীর ক্রিকেট ম্যানেজারও ছিলেন।

Advertisement

তার ওপর বরিশাল বুলসের অন্যতম স্বত্বাধিকারী- সব মিলে আব্দুল অাওয়াল চৌধুরী ভুলু ক্রিকেটপাড়ার পরিচিত মুখ। প্রতিষ্ঠিত সংগঠক। তার বিরুদ্ধে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল কি যথাযথ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে?

ক্রিকেটপাড়ায় প্রশ্ন। নানা গুঞ্জন। জল্পনা-কল্পনার ফানুস আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কোনো পরিচয়ই শেষ পর্যন্ত কাজে দেবে না। মুশফিক ইস্যুতে অনিবার্য শাস্তির মুখে আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু।

জাতীয় টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য টিভি সাক্ষাতকারে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ করে বরিশাল বুলস ফ্র্যাঞ্চাইজি আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু এখন শাস্তির প্রহর গুণছেন। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের কথায় তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

Advertisement

আজ সকালে জাগো নিউজের সাথে আলাপে বিপিএল আয়োজক ও ব্যবস্থাপক কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিই আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলুর একমাত্র পরিচয় নয়। তিনি বোর্ড পরিচালক। মানে- দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংগঠনের একজন শীর্ষকর্তা। তিনি দেশের টেস্ট অধিনায়কের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারেন না। শুধু তাই নয়, আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু মুশফিককে বাজে ক্যাপ্টেনও বলেছেন। তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব সচেতনতার অভিযোগও এনেছেন।

মুশফিকের বিরুদ্ধে এমন শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাশাপাশি তার ক্যাপ্টেন্সি বাজে এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধে ঘাটতি অনেক বড় অভিযোগ। এ অভিযোগ যে শুধু বরিশাল বুলসের অধিনায়কের বিরুদ্ধে বর্তায়, তা নয়। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের ওপর অনেক বড় ধরনের অভিযোগের সামিল। 

তার মানে, মুশফিকুর রহীম উশৃঙ্খল! অধিনায়ক হিসেবে বাজে! তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধও কম! তার মানে, বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়কের বিরুদ্ধে অনেক বড় অভিযোগ। সে অভিযোগের দায় বর্তায় বিসিবির ওপর। দুঃখজনক হলেও সত্য, আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু মুশফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আগে এসব খুঁটিয়ে দেখেননি। একজন বোর্ড পরিচালক হিসেবে তার তা চিন্তা করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। এতে করে তার নিজের দায় দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

মোদ্দাকথা, আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা বলতে পারেননি। তার ওই মন্তব্যে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক সন্মানহানি ঘটেছে। প্রকারন্তরে বাংলাদেশ টেস্ট দলের ইমেজও হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

Advertisement

এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত মন্তব্যের কারণে আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলুকে শো’কজ করা ছাড়া পথ নেই আমাদের। রোববারই শো’কজ নোটিশ চলে যাচ্ছে তার কাছে। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হবে। 

এদিকে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব কাল শনিবার রাতে গুলশানে আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলুর সাথে একান্তে কথা বলেন। জাগো নিউজকে সে তথ্য জানিয়ে ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, আমি তার সাথে কথা বলেছি। তার কাছে জানতে চেয়েছি, আপনি বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল পরিচালক হয়ে কী করে মুশফিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনলেন? আপনি মুশফিকের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনলেন কী করে? তাকে বাজে অধিনায়ক বললেন কী করে? তার দায়িত্ব বোধ নিয়েই বা প্রশ্ন তুললেন কীভাবে?

মুশফিক যে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক, এমন বড় অভিযোগ মানে যে বাংলাদেশের টেস্ট ক্যাপ্টেন্সির ওপর অনেক বড় অভিযোগ তা কি ভেবে দেখেছেন? তার দায়দায়িত্ব যে বিসিবির ওপর বর্তায়- তা কি মাথায় ছিল আপনার? 

আপনি যতই একটি দলের মালিক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি হোন না কেন, টেস্ট দলের অধিনায়কের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করতে পারেন না। কাজেই আপনাকে শো’কজ করা হবে। আপনার জবাব আগে হাতে পাই। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। 

জানা গেছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিবের অমন প্রশ্নর কোনো জবাবই দিতে পারেননি আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু। ইসমাইল হায়দার মল্লিক জাগো নিউজকে জানান, আগের রাতে আমার প্রশ্নর জবাবে নিরুত্তর ছিলেন আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু।

বোর্ডের নীতি নির্ধারকদের অন্যতম ইসমাইল হায়দার মল্লিকের কথায় পরিষ্কার, যত নামি ক্রিকেট সংগঠক ও প্রভাবশালী শিবিরের প্রতিনিধিই হোন না কেন, আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু অনিবার্য শাস্তির মুখে। কারণ তার অভিযোগ এমন একজনের বিরুদ্ধে যিনি বরিশাল বুলসের অধিনায়কই নন, জাতীয় টেস্ট দলেরও ক্যাপ্টেন। তাই ভুলুর ওপর শাস্তির খাড়া ঝুলছে।

ক্রিকেটপাড়ায় জোর গুঞ্জন, বড় ধরনের অর্থদণ্ড হতে পারে ভুলুর। আবার কোনো কোনো মহল ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তাকে বাদ দেয়ার জোর দাবিতে সোচ্চার। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে মামুলি দুঃখ প্রকাশ করেও পার পেয়ে যেতে পারেন ভুলু। এখন সে শাস্তির ধরন কী হয়, সেটাই দেখার!

এআরবি/এনইউ/এমএস