জাতীয়

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় নারী

কর্মক্ষেত্র ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নারীরা। বাসা থেকে কর্মক্ষেত্রে যেতে ও আসতে বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানি, শ্লীনতাহানি ও ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল-ক্লিনিকে গিয়েও রেহাই মিলছে না তাদের। এসব কারণে আত্মহত্যা ও হত্যার ঘটনাও বাড়ছে।থানা পুলিশ ও মানবাধিকার সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নারী ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, শ্লীনতাহানি ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও মামলার তদন্ত ও চূড়ান্ত রায় প্রকাশে ধীর গতি থাকায় অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছে বহাল তবিয়তে।নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট ও মানবাধিকার সংগঠকদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্পৃহতা ও নিষ্ক্রিয়তার সুযোগেই একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। শারীরিক-এর চেয়ে মানসিকভাবে লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের ঘটনা আরো বেশি ভীতিকর হয়ে ওঠে। তবে শুধুমাত্র ঢাকায় নয়, সারাদেশেই এটা অনেকটা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে।মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসে শুধু ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেছে ১২৩টি। এরমধ্যে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু ও কিশোরীও রয়েছে। এই ১২৩ জনের মধ্যে মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে রয়েছে ৬ বছরের নিচে শিশু রয়েছে ৭ জন।যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪০ নারী। এরমধ্যে দুইজন আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া কর্মক্ষেত্র, স্কুল কলেজ থেকে ফিরতে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১৪ জন। এসব ঘটনায় প্রতিরোধ করতে গিয়ে অপরাধীদের হাতে নিহত হয়েছেন এক পুরুষ। নারীকে ধর্ষণ ও শ্লীনতাহানির থেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ২০ জন।ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, শ্লীনতাহানি ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা। গত দুই দিনেই রাজধানীর ভাটারা ও শাহবাগ থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন দুই যুবতী। পৃথক এ দুটি ঘটনায় কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পঞ্চগড় থেকে আসা এক রোগীর ২০ বছর বয়সী মেয়েকে প্রেমে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করেছে হাসপাতালে কর্তব্যরত আনসার বকুল। গত শুক্রবার বিকেলে ধর্ষণের অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। মামলার পর থেকে ওই আনসার সদস্য পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।এর আগে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এক আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণ করে পাঁচ যুবক। এমন অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা (মামলা নং ২৬) দায়ের করেন। এ ঘটনাতেও আসামিদের কেউ ধরা পড়েনি।গত শনিবার রাজধানীর গুলিস্তানে এক তরুণীকে (১৮) লাঞ্ছিত করার অভিযোগে জড়িত মো. ইউসুফ (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই ঘটনায় অপর এক যুবক পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।ভুক্তভোগী ওই তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের অবহলায় অপর লাঞ্ছনাকারী যুবক পালিয়েছে। এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানবাধিকার সংগঠন।আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, যেভাবে নারীদের ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, শ্লীনতাহানি ও ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা এতে প্রকট হয়ে উঠছে।তিনি বলেন, চলন্ত মাইক্রোবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনাটি সমাজের বিকট ও বীভৎস চেহারাই তুলে ধরেছে। এ ধরনের ঘটনা যখন শুনি কিংবা পত্রিকায় পড়ি, তখন প্রচণ্ডভাবে বিক্ষুব্ধ হই, বিচলিত বোধ করি। ভাবি, এর প্রতিকার করা যাদের দায়িত্ব তারা কী করছেন?বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু জাগো নিউজকে বলেন, দেশে যেন এক প্রতিকারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। একটা সময় এগুলো বেড়েছিল। মাঝে কমলেও আবার তা বাড়ছে। আইনি প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা পাড় পেয়ে যাচ্ছে।‘নারীপক্ষ’ সংগঠনের সদস্য ফেরদৌস আজিম বলেন, ঢাকায় সব রকমের নিরাপত্তাহীনতায় নারীরা ভোগেন। টিটকারি থেকে শুরু করে শারীরিক হামলা, সব রকমের ঘটনাই ঘটে।পুরো আবহই এরকম যে, শ্রমজীবী নারী থেকে মধ্যবিত্ত নারী, কেউ একা চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। শারীরিক বিষয়ের চেয়ে মানসিকভাবে বেশি ভীতিকর হয়ে উঠছে।জেইউ/বিএ/আরআই

Advertisement