বিনোদন

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাসুদের সঙ্গে গাইলেন ন্যানসি

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাসুদ খানের সঙ্গে গাইলেন দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। গতকাল শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর বাজনা স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিও সম্পন্ন হয়েছে। মাসুদ-ন্যানসি দ্বৈতভাবে কণ্ঠ দিয়েছেন রোমান্টিক ধাঁচের একটি গানে। এই গানের শিরোনাম ‘কল্পনা’। যার কথা লিখেছেন আনাম রহমান। সুর করেছেন শিল্পী মাসুদ নিজেই এবং সংগীতায়োজন করেছেন মুশফিক লিটু।

Advertisement

মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ন্যানসি আপার সঙ্গে গান করব। অনেক কষ্টের পর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। রোজার আগেই তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করি। এরপর ২০ রোজার আগে দ্বিতীয় দফায় যোগাযোগ হয়। তখন সময় স্বল্পতার কারণে রেকর্ডিং সম্ভব হয়নি। অবশেষে চমৎকারভাবে গানের রেকর্ডিও শেষ হয়েছে। ন্যানসি আপা আমাকে আগামীতে আরও ভালোভাবে গান করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। আমি তার মতো জনপ্রিয় তারকার ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তিনি আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। চমৎকার মানুষ তিনি।’

এই গান নিয়ে উচ্ছ্বসিত ন্যানসি। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আসলে মাসুদের সঙ্গে গানের প্রসঙ্গটাই আমার জন্য দারুণ একটি সারপ্রাইজ হয়ে এসেছে। আমি নতুনদের সঙ্গে নিয়মিতই গান করি। কিন্তু চেষ্টা করি গানের কথা, সুর ও গায়কীর যেন একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকে। যখন মাসুদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি গানের সুর চাইলাম। সুর হাতে পেয়ে শোনার পর খুব একটা ভালো লাগেনি। কিন্তু গানের প্রতি ওর আন্তরিকতা দেখে গানটি করতে রাজি হই। তবে আমার জন্য এতো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল বুঝতেই পারিনি।’

ন্যানসি বলেন, ‘গানের রেকর্ডে অংশ নিতে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম মাসুদ চোখে দেখেন না। দুটি চোখেই তার দৃষ্টি নেই। অথচ এই কথাটা তিনি আগে একবারও বলেননি আমাকে। নিজেকে কোনো রকম দুর্বলতার সুযোগ তিনি নেননি। গানের প্রতি ভালোবাসা দিয়েই গান করে যাচ্ছেন। আমার কাছে বিষয়টি খুব ভালো লাগল। আরও ভালো লাগল জেনে, মাসুদ গান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করছেন। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গানের জন্য অনেক পরিশ্রম করছেন। তার সঙ্গে গানটি আমি বেশ উপভোগ করেই গেয়েছি। আশা করছি এ গানটি শ্রোতাদের ভালো লাগবে। মাসুদের সংগীত জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা রইল।’

Advertisement

কল্পনা শিরোনামের এই গানটি আগামী ঈদুল আজহায় মিউজিক ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হবে সিডি জোনের ইউটিউব চ্যানেলে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বুলু আহমেদ জানান, ‘মাসুদ খান খুব ভালো গান করেন। তার মধ্যে গানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব আমাকে মুগ্ধ করেছে। আজকাল অনেক খ্যাতিমান শিল্পীও গানকে সাধন করেন না। দৃষ্টিহীন হওয়ার পরও মাসুদ এতদূর এসেছেন। তার সহযোগিতায় আমার প্রতিষ্ঠান সবসময় তার সঙ্গে থাকবে।’  

দু'চোখে পৃথিবীর আলো দেখতে না পেলেও গান করার স্বপ্নে বিভোর মাসুদ। প্রতিকূলতা তাকে দমাতে পারেনি। সবকিছু পায়ে ঠেলে মাসুদ এগিয়ে যাচ্ছেন তার লক্ষ্যে। দৃষ্টিহীন হয়েও মাসুদ লেখাপড়া করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চতুর্থ বর্ষে। হাজী মুহম্মদ মহসীন হলে আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও মাসুদ হলে থাকেন না। মাসুদ বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নই। দু-বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হই। তখনই চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলি।’

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মিউজিকের ওপর আমার ব্যাপক ঝোঁক ছিল, এখনও আছে। এসএসসি পাস করেই এইচএসসিতেও মিউজিক নিয়ে পড়ালেখা করেছি। এরপর ঢাবিতে মিউজিক নিয়ে পড়ছি। গান নিয়েই আগামীতে চলতে চাই। আমার ইছা আরও দেশের নামকরা শিল্পীদের সঙ্গে গান করব। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে চাই আমি।’

এর আগে মাসুদ খানের গানের চারটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। একটি ২০১৫ সালে এবং ২০১৬ সালের তিনটি গানের মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হয়। গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন  মোহনা, সাবা, ফারাবি।

Advertisement

এনই/এলএ/জেআইএম