মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন বরিশাল বুলসের অন্যতম মালিক আব্দুল আউয়াল চৌধুরী ভুলু। এতে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার চৌধুরী মল্লিক। এ ঘটনায় মুশফিকের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গভর্নর কাউন্সিল এবং বিসিবি।
Advertisement
আউয়াল চৌধুরী ভুলুকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে মুশফিকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বরিশাল বুলসের এই মালিককে। তাকে আর্থিক জরিমানাও করা হতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার চৌধুরী।
আব্দুল আউয়াল চৌধুরী ভুলুর বক্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মুশফিকুর রহীম নিজেও। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসমাইল হায়দার চৌধুরি মল্লিক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দীন চৌধুরী সুজন।
আজ (শনিবার) দুপুরে ভুলুর করার মন্তব্যের প্রতিবাদে বিসিবিতে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে মুশফিক অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। এসময় তার কন্ঠরোধ হয়ে আসছিল বারবার। চোখ ছলছল করছিল। একপর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই তিনি লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে চলে যান।
Advertisement
এরপর সংবাদ সম্মেলন চালিয়ে যান ইসমাইল হায়দার চৌধুরী মল্লিক ও নিজামুদ্দীন চৌধুরী সুজন। বরিশাল বুলসের স্বত্ত্বাধিকারী ভুলুর করা টেস্ট অধিনায়কের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য শুধু মুশফিকই নয় পুরো ক্রিকেট অঙ্গণেই ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
শুধু ভক্তদের কাছেই নয়, সকল ক্রিকেটপ্রেমীর কাছেই মুশফিক পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল ক্রিকেটার। জাতীয় দলের অনুশীলনেও তার বিলম্বে আসার অভিযোগ নেই। উল্টো প্রায়ই তাকে দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনুশীলনে চলে আসছেন। এমনকি অন্য খেলোয়াড়রা যখন বিশ্রামে থাকেন, তখনও এই টাইগার ক্রিকেটারকে দেখা যায় ব্যাট অথবা গ্লাভস হাতে নিবিড় অনুশীলন করে যাচ্ছেন।
জাতীয় ক্রিকেট দলে মুশফিককে সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেও ধরা হয়। তিনি সবসময় মাঠে এবং ড্রেসিং রুমে ক্রিকেটারদের চাঙ্গা করার চেষ্টাও করেন। এমন একজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য দেশের কোটি ক্রিকেট প্রেমিকের মত বিপিএল গভার্নিং কাউন্সিলকেও আহত করেছে।
মুশফিকের পক্ষ নিয়ে ইসমাইল হায়দার চৌধুরি মল্লিক বলেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়কের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ একদমই অনাকাঙ্খিত এবং অপ্রত্যাশিত। আমরা আব্দুল আউয়াল চৌধুরিকে তলব করেছি। তার সাথে বসবো। তার কথা শুনবো এবং বক্তব্য শুনে আমরা ব্যবস্থা নিবো। যদি প্রমাণিত হয় তিনি (ভুলু) আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, তবে তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেটা আর্থিক জরিমানা হোক কিংভা নিষিদ্ধ করাই হোক।’
Advertisement
এ সময় ইসমাইল হায়দার চৌধুরি আরও বলেন, ‘মুশফিক আমার কথামতই বরিশালে খেলেছিল। তার আগ্রহ ছিল না তবুও; কিন্তু জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করার অধিকার আমরা কাউকেই দেইনি। আর বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের নিয়ম-নীতি অনুযায়ীও প্রকাশ্যে কেউ এমন মন্তব্য করতে পারে না। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারতো।’
এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে আমি জাতীয় দলে খেলছি। আমার সম্পর্কে এমন অভিযোগ এর আগে কখনও ওঠেনি। তিনি আমাকে খারাপ খেলোয়াড় বলতে পারেন; কিন্তু আমাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলতে পারেন না। আমি আশা করবো, মল্লিক ভাইয়েরা বিষয়টা দেখবেন। আমি তাদেরকে জানিয়েছি। আজ আমার সাথে হয়েছে, সামনে যে অন্য কোনো খেলোয়াড়ের সাথে হবে না, তার গ্যারান্টি কি? এইটুকু সম্মান তো একজন খেলোয়াড় পেতেই পারেন।’
এইটুকু বলতেই মুশফিকের গলা ধরে আসে এবং চোখ ছলছল করে ওঠে। তারপরই দ্রুত সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করেন জাতীয় দলের এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।
উল্লেখ্য, গতকাল (শুক্রবার) বরিশাল বুলসের স্বত্ত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডিরেক্টর আব্দুল আউয়াল চৌধুরী ভুলু একাধিক বেসরকারি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে মুশফিকের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন। এমনকি মুশফিকের অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি মুশফিকের বিরুদ্ধে দলের ভেতর গ্রুপিং করার অভিযোগও তোলেন।
এনইউ/আইএইচএস/জেআইএম