আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না চাইলেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
Advertisement
শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সঙ্গে সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক তিনি একথা বলেন।
বিএনপিকে উপহাস করে তিনি বলেন, দলটির রূপকল্প বা ভিশন ২০৩০ মানেই বিভিন্ন জেলায় জেলায় নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীষণ মারামারি।
‘সদস্য সংগ্রহের নামে তারা জেলায় জেলায় যেভাবে বিশৃঙ্খলা করছে তাতে করে দলটির নেতাকর্মীদের গায়ে কাপড় থাকে না, এগুলো দেখে হাসি পায়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেগুলো দেখার পর বিএনপি তা নকল করতে গিয়েই বিপাকে পড়ে’ যোগ করেন কাদের।
Advertisement
বিএনপি আওয়ামী লীগকে অনুকরণ করে এমন বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকের ভিশন শুধু নয়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম, ‘এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে।’ পরে জিয়াউর রহমান হত্যার পরও বিএনপিকে দেখেছি ‘এক জিয়া…।’
আগামী আগস্ট মাসের শোকের কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচন নিয়ে নতুন নতুন ধারা তৈরি হবে। গণতন্ত্রের দিক বিবেচনায় এটা চলুক সেটা আমরাও চাই। শেষ না দেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, আ স ম আব্দুর রব ভাই আমার নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তার বাসায় উল্টাপাল্টা কিছু ঘটে থাকলেও অবশ্যই খবর পেতাম। তেমন কিছু ঘটেনি। তারপরও আমি খবর নিবো।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কারণে এখনও নামাজ পড়তে শেজদা দিতে পারি না। আমার চেয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। আইভী রহমানসহ ২৩ জন তো জীবনই দিয়েছেন। এরপর সেইসময়ের সরকার মামলার আলামত নষ্ট করে দিয়ে, তথাকথিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত, জজ মিয়া নাটক, এবিআই তদন্ত করতে না দিয়ে সাধু সাজতে চেয়েছিল।
১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩টি জেলায় সিরিজ বোমা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। বাংলা ভাই-শায়খ আব্দুর রহমানদের উত্থান বিএনপির আমলেই হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চট্টগ্রামে, বরিশালের গৌরনদী, নাটোর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে। কই খালেদা জিয়ার ওপর তো কোনা হামলার কথা শোনা যায়নি।
Advertisement
আমরা কি বেগম জিয়ার মিটিংয়ে হামলা চালিয়েছি? আওয়ামী লীগের আহাসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এম এম এস কিবরিয়া, সাংবাদিক মানিকসহ কত নাম বলবো যাদের হত্যা করা হয়েছে। কত গুম, কত খুন করেছে বিএনপি তার হিসাব নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নামে ২৫০ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে। এখনো বার্ন ইউনিটিতে আহাজারি শোনা যায়।
গণমাধ্যমের প্রতি বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক একটি দল। আমাদের ঘরোয়া গণতন্ত্র, তর্ক-বিতর্ক নিয়ে, সঠিক তথ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করুন। তথ্য যাচাই না করে রঙ চড়ানোর দরকার আছে কি?
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের সমালোচনা আমরা করবো। কেউ কেউ এমন বিষয় নিয়ে আসেন, যেগুলো তথ্য নয়। আংশিক সত্যও আসে না, পার্টির মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি কোনো নিউজ করার পক্ষে নই, গঠনমূলক সমালোচনা করলে আমরা দল হিসাবে শুদ্ধ হতে পারি। গণমাধ্যমকে আমরা শত্রু মনে করি না।
সারাদেশে ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় খুব ভালোভাবে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়নি বলেও মনে করেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে খবর আসে না। এটা যদি বিএনপি করতো তবে বড় করেই খবর প্রকাশ হতো।
বৃহস্পতিবার সারাদেশে ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২ স্থগিত হয়েছে বন্যাজনিত কারণে। বাকি ২৯টিতে আ. লীগ ২২, স্বতন্ত্র ৪, বিএনপি ৩। তৃণমূলে আমরা শক্তিশালী, আমরা মুখে বলি না, কাজেও দেখিয়েছি। তৃণমূলে যারা শক্তিশালী তারাই আগামী নির্বাচন জিতবে।
আগস্ট মাসের কর্মসূচি পালনের নামে ভুয়া সংগঠন বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি যেন করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেইন প্রমুখ।
এইউএ/জেএইচ/পিআর