প্রতিদিন ছোট ছেলে মফিজুল ইসলামকে ভোরবেলা নামাজ পড়তে ডাকে মা। এতেই ছেলের ঘুম ভেঙে যায়। নামাজ পড়তে ডাকায় দারুণ বিরক্তি এই ছেলের। ঘুম থেকে উঠেই মাকে শুরু করেন গালিগালাজ। অবশেষে একদিন বাজার থেকে শিকল তৈরি করে নিয়ে আসেন এই ছেলে। এরপর প্রতিদিন ভোরবেলা তার স্ত্রীকে দিয়ে মায়ের পায়ে শিকল দিয়ে বাড়ির পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এভাবেই চলছে গত একমাস।
Advertisement
ঘটনাটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের। ওই গ্রামের বাল্লক ওরফে পুটে গাজীর স্ত্রী জানু পারভীন(৭০)। স্বামী মারা গেছেন ৩০ বছর আগে।
স্থানীয়রা জানান, জানু পারভীনের ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। থাকেন ছেলেদের সঙ্গে। ছোট ছেলে মফিজুল ইসলাম আর তার স্ত্রী সালমা খাতুন ছাড়া বাকিরা কেউ দুর্ব্যবহার করে না। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে ছেলেদেরকে নামাজের জন্য ডাকে। কিন্তু এই ডাকাডাকি ছোট ছেলে মফিজুল ও তার স্ত্রী সালমা খাতুনের সহ্য হয়না। মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তারা প্রতিদিন বৃদ্ধ মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।
কয়েকবার ডাকার পর জানু পারভীন অন্য মনস্ক হয়ে পাড়ায় বেড়াতে যায়। বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তোলে। একটু সকাল হলেই আবার বাড়িতে চলে আসে। তার এমন আচরণে এলাকাবাসীর সমস্যা হয়না সমস্যা হয় ছোট ছেলে মফিজুল ও তার স্ত্রী সালমা খাতুনের।
Advertisement
স্থানীয়রা আরও জানান, মাঝে মাঝে ছোট ছেলের ঘরের বারান্দায় উঠলে বউমা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। মায়ের এমন আচরণে ছোট ছেলে শফিকুল বাজার হতে লোহার শিকল বানিয়ে আনে। মাঝে মাঝে সেই শিকল পায়ে দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা অবস্থায় কেউ সেখানে গেলে বৃদ্ধা মা জানু পারভীন তাদেরকে বাঁধন খুলে দেয়ার অনুরোধ জানান। তবে কেউ সাহস করে না মজিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সালমা খাতুনের ভয়ে।
এসব ঘটনা নিশ্চিত করে শিবপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি শওকত আলী বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তাদের বলে বৃদ্ধা মাকে শিকলের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম একদিন। পরবর্তীতে আর খোঁজ নেয়নি। ছেলে মফিজুল ইসলাম বলেছে, মায়ের মাথা ঠিক নেই। মানসিক ভারসম্যহীন হয়ে গেছে। এ জন্য শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি।
এদের শাস্তি হওয়া উচিত জানিয়ে শিবপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনিছুর রহমান বলেন, ছোট ছেলে মফিজুল ইসলামের বউ সালমা খাতুন অনেক বিপদজনক। কাউকে সম্মান করে কথা বলে না। বৃদ্ধা শাশুড়িকে তার সহ্য হয়না। আর মফিজুল তার বউয়ের কথায় উঠে বসে। এসকল বউমা ও ছেলে সমাজের কলঙ্ক।
এদের আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক দেবাশীষ সরদার বলেন, ঘটনাটি জানা ছিলো না। তবে অমানবিক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
Advertisement
আকরামুল ইসলাম/এমএএস/পিআর