বন্যার পানি আজ কয়দিন ধইরা আমার ঘরে উঠছে। ঘরে যা আছিল, তা দিয়া কুনোমতে খাইয়া-না খাইয়া পোলাপাইন নিয়া বাঁইচা আছি। ঘরে চ্যাইল (চাউল) ফুরাইয়া গ্যাছে। অহন আমরা কী খাইয়া বাঁচমু। কেউ আমাগো দেখবার আহে না।
Advertisement
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শৈলাবাড়ী গ্রামের আয়শা খাতুন, হাসিনা বেওয়া, সখিনা বেওয়াসহ পানিবন্দি অনেকে নিজেদের দুর্দশার কথাগুলো বলছিলেন এভাবে।
বন্যা কবলিত এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলেই তারা ছুটে আসছেন, ভিড় জমাচ্ছেন, একটু সাহায্যের আশায়।
নিজের নামটা লেখানোর আশায় তারা ছুটে আসছেন। কোনোমতে নামটা লেখাতে পারলে কিছু সাহায্য জুটতে পারে এমন আশা তাদের।
Advertisement
কৃষক সোলেমান শেখ, মজিবুর রহমান বলেন, আইজ ৫/৭ দিন ধইর্যা বাড়িতে বানের পানি। জমিজমা পানির নিচে। কোন কাম নাই। রিলিফও পাই নাই। খুব কষ্টের মধ্যে দিন চলতাছে।
একই অবস্থা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রানীগ্রাম, চর মালশাপাড়া, কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চর সাপড়ী, খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের চর খোকশাবাড়ী, গুনেরগাতী, ছোনগাছা ইউনিয়নের শিমলা, বালিঘুগরী, পাঁচঠাকুরী গ্রামের হাজার হাজার মানুষের।
এ সব এলাকায় গভীর নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যার পচা পানি ব্যবহারের ফলে চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫ উপজেলার ২২৪টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এ সব গ্রামের প্রায় ৪১ হাজার পরিবারের প্রায় দু’লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন।
Advertisement
ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মধ্যে ১১৮ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাথ ৩৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে আরও ২৩১ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা জানান, বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যা কবলিতদের জন্য ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তায়ও। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকার সকল সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এনএফ/এমএস