কক্সবাজারের উপকূল জুড়ে রেণু পোনা নিধনের মহোৎসব চলছে। চিংড়ি পোনা আহরণে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে নানা প্রজাতির মাছের পোনাও। এতে কমছে মাছের প্রজনন। বিলুপ্ত হচ্ছে নানা জলজপ্রাণী। সংশ্লিষ্টদের নজরদারি না থাকায় এ পরিস্থিতি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
Advertisement
উপকূলের রেণু পোনা আহরণকারী অনেকে জানান, চিংড়ি পোনা আহরণে কখনো আইনি বাধা পাননি তারা। বারণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন বা মৎস্য অধিদফতর। তাই এক প্রকার বিনা বাধায় কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও সদরের পোকখালী, গোমাতলী, চৌফলদন্ডী ও খুরুশকুলে শিকার করা হচ্ছে রেণু পোনা।
পোকখালী ইউপির গোমাতলী এলাকার সদস্য আলাউদ্দিন জনি ও পেকুয়ার উপকূলীয় জনপ্রতিনিধি মনজুর আলম, মো. ইসমাঈল ও মো. শাহেদ বলেন, সমাজের নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষগুলো জীবিকা নির্বাহ করতে পোনা আহরণকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। দেশের মৎস সম্পদ রক্ষা করতে তাদের পূনর্বাসন করে এ পেশা থেকে ফিরিয়ে আনা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সচেতন মহলের মতে, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে নির্বিচারে রেণু পোনা নিধনের মহোৎসব চললেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না মৎস অধিদফতর। তাই চিংড়ির রেণু পোনা ধরতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে প্রতিদিন।
Advertisement
এদিকে উপকূলের বিভিন্ন চ্যানেলে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা মশারি ও বিহিন্দী জাল দিয়ে রেণু পোনা ধরছে। প্রতিবার জাল ফেলে ১০-২০টি চিংড়ির রেণু পোনা পেলেও তার সঙ্গে উঠে আসছে টেংরা, পোয়াসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছের পোনা।
চিংড়ি পোনা আলাদা করে পাত্রে জিইয়ে রাখলেও অন্য প্রজাতির মাছের পোনাগুলো ডাঙায় অথবা চরে ফেলে দেয়ায় সেগুলো মারা যাচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট বিহিন্দী জাল, মশারি জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে রেণু পোনা নিধন করাচ্ছেন। এসব রেণু পোনা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সড়ক ও নদী পথ দিয়ে বড় বড় ড্রাম কিংবা প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্নস্থানে চালান করছেন।
কক্সবাজার জেলা মৎস কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল আলিম বলেন, জনবল সংকটের কারণে রেণু পোনা আহরণ শতভাগ বন্ধ করার সক্ষমতা আমাদের নেই।
Advertisement
উপকূলের হাজার হাজার মানুষ এ কাজে জড়িত। অভিযান চালিয়ে আমরা রেণু পোনা আহরণ কাজে ব্যবহৃত জাল ধ্বংস করে দিলেও পরে তারা নতুন জাল নিয়ে নেমে পড়ছেন পোনা আহরণে। তারপরেও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, একটি চিংড়ির রেণু পোনা (পিএল-পোস্ট লাম্বা) ধরার জন্য অন্য প্রজাতির নয় থেকে ১২টি রেণু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে।
এরমধ্যে দুই হাজার প্রজাতির মাছ ও বিভিন্ন প্রকারের জলজপ্রাণি প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে। যে কারনে সাগর ও নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও অনান্য জলজপ্রাণির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণেই সরকার বাগদা ও গলদা প্রজাতির রেণু পোনা আহরণ ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস