আসামির মৃত্যুর দুই মাস পর তাকে পলাতক দেখিয়ে প্রতিবেদন দেয়ায় প্রতিবেদক মহেশখালীর থানার (এসআই), কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) ও মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সংস্থা।
Advertisement
প্রসিকিউশনের আবেদনের শুনানি শেষে দুই মাস পরে আদেশ দেয়া হবে বলে বিষয়টি রেখে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের শুনানি দুই মাস পিছিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।
ট্রাইব্যুনালে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবহান তরফদার ও রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
Advertisement
পরে প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ১৮ জনের বিরুদ্ধে আমরা প্রসিকিউশন থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করি। এরপর ওই মামলায় গত ২৫ মে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য হয়। ধার্যকৃত দিনে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান জানান, আসামি মৌলভী আব্দুল মজিদ মারা গেছেন।
তখন ট্রাইব্যুনাল জানতে চান এ বিষয়ে আপনার কাছে কোনো নথি আছে কি না। আইনজীবী সাত্তার বলেন, আমাকে অনুমতি দিলে খোঁজ নিতে পারি। পরে আইনজীবী অনুসন্ধানে জানতে পারেন আসামি আব্দুল মজিদ মাস্টার ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর মারা যান। মৃত্যুর পর পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফনও করা হয়।
আসামির মৃত্যুর খবরের সত্যতা যাচাই করতে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মহেশখালী থানার ওসি বরাবর প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেন। পরে গত ৫ জুলাই পুলিশ আসামির মৃত্যুর খবরটি সত্য বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামি আব্দুল মজিদ ২২ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত বলেন, আসামি মারা যাওয়ার দুই মাস পরও পুলিশ জানে না আসামি মারা গেছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মহেশখালীর থানার এসআই জহিরুল একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে বলা হয়, আসামির বাড়িতে গিয়ে কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি পলাতক।
প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত বলেন, এখন প্রশ্ন হলো যে একজন আসামির মৃত্যু হয়েছে ডিসেম্বর মাসে কিন্তু দুই মাস পরও আসামিকে পলাতক দেখিয়ে প্রদিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের প্রতিবেদনে বিচারিক কাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছি।
তিনি বলেন, এসব দায়সারা কাজের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১১ (৪) ধারা মোতাবেক কর্তব্য কাজে অবহেলার জন্য এক বছর শাস্তির বিধান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত ও দেশান্তরসহ মানবতাবিরোধী ১৩টি অভিযোগ আনা হয় এই আসামিদের বিরুদ্ধে।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মৌলভী জকরিয়া শিকদার (৭৮), মো. রশিদ মিয়া বিএ (৮৩), অলি আহমদ (৫৮), মো. জালাল উদ্দিন (৬৩), মোলভী নুরুল ইসলাম (৬১), মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাবুল (৬৩), মমতাজ আহম্মদ (৬০), হাবিবুর রহমান (৭০), মোলভী আমজাদ আলী (৭০), মৌলভী আব্দুল মজিদ (৮৫), বাদশা মিয়া (৭৩), ওসমান গণি (৬১), আব্দুল শুক্কুর (৬৫), মোলভী সামসুদ্দোহা (৮২), মো. জাকারিয়া (৫৮), মো. জিন্নাহ ওরফে জিন্নাত আলী (৫৮), মোলভী জালাল (৭৫) ও আব্দুল আজিজ (৬৮)।
মামলার পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে একজন জামিনে রয়েছেন। চারজন কারাগারে। বাকিরা পালাতক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) মো. নূরুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১২ মে থেকে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তদন্ত শেষ করেন।
জানা যায়, প্রতিবেদনে ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচি এবং ঘটনাস্থলের স্থিরচিত্র দাখিল করা হবে প্রসিকিউশনে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে মোট ঘটনা ১৩টি। এর মধ্যে হত্যার ৯৪টি, নারী নির্যাতন অসংখ্য এবং লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। মামলায় মোট ১২৬ জন সাক্ষী রয়েছেন।
এফএইচ/জেডএ/আরআইপি