এসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে গিয়ে তামিম ইকবালের সেখানে অন্তত মাস খানেক থাকার কথা ছিল। এসেক্সের হয়ে ৮/৯টি ম্যাচ খেলে তবেই দেশে ফিরে আসার কথা তার; কিন্তু কেন্টের বিপক্ষে কেবল একটি ম্যাচ খেলেই হঠাৎ দেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই ওপেনার।
Advertisement
হঠাৎ তামিম কেন এভাবে দেশে ফিরে আসলেন- এ নিয়ে নানা গুঞ্জন। পাওয়া যাচ্ছে নানামুখী বক্তব্য। তামিমের নিজের কিংবা পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, জরুরি ব্যক্তিগত কারণে তিনি দেশে ফিরেছেন।
আবার তামিমের কাউন্টি ক্লাব এসেক্সের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে তামিমের এক ম্যাচ খেলে দেশে ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, একান্ত ব্যক্তিগত। আবার ক্লাবের দেয়া সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তামিমের ব্যক্তিগত বিষয়কে সবারই সম্মান জানানো উচিত।
জাগো নিউজে তামিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ব্যক্তিগত কারণটা হলো- বন্ধু সমতুল্য ছোট চাচা আকরাম খান গুরুতর অসুস্থ। এ কারণেই দ্রুত দেশে ফিরে এসেছেন তামিম। ক্লাবকে এ বিষয়টি জানানো হয়নি। তাতে ক্লাব যদি তাকে না ছাড়তে চায়! সুতরাং ক্লাবকে জানানো হয়েছে ব্যক্তিগত জরুরি কারণ।
Advertisement
কিন্তু তামিমের দেশে ফিরে আসার বিষয়টি আর ব্যক্তিগত থাকল না। মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়ে গেছে, লন্ডনের স্টারফোর্ড এলাকায় ডিনার সেরে স্ত্রীকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী তামিমদের ধাওয়া করেন। তামিমের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার ওপর এসিড নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল ধাওয়াকারীরা। কোনোমতে দৌড়ে, পালিয়ে রক্ষা পান তামিম এবং তার পরিবার। এ ঘটনার কারণে আতঙ্কে দেশে ফিরে আসলেন তামিম।
মিডিয়ায় এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। সেই তোলপাড়ের জবাব দিতে তামিম মুখ খোলেন। নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে তামিম হামলার ঘটনা সত্যি নয় বলে বিবৃতি দেন। সেখানে আবার লেখেন, ইংল্যান্ড তার প্রিয় জায়গা। সেখানে গিয়ে ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসেন তামিম এবং ভবিষ্যতেও খেলতে যেতে চান।
দু-তিন রকমের বক্তব্য আসার কারণে প্রশ্ন উঠেছে- সত্যি কোনটা? তামিম এবং এসেক্সের বক্তব্য নাকি মিডিয়ায় প্রকাশিত ‘হেট ক্রাইমে’র ঘটনা? এ নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো।
তারা সেখানে লিখেছেন, ইংল্যান্ডে থাকা নিয়ে তামিমের পরিবার খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত না। তার ওপর সম্প্রতি লন্ডন এবং ম্যানচেস্টারে আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ বেশকিছু ঘটনায় প্রাণহানিতে উদ্বিগ্ন হয়ে একটু নিরাপদ এলাকাতেই বাসা ভাড়া করতে চেয়েছিলেন তামিম। সে কারণে এসেক্স কর্তৃপক্ষ চেলমসফোর্ডে তাদের হেডকোয়ার্টার থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে স্টারফোর্ডে একটি লাক্সারি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে দেয়। এক মাসের জন্য এই অ্যাপার্টমেন্টেই ওঠেন তামিম।
Advertisement
এরই মধ্যে লন্ডন এবং ম্যানচেস্টারে হামলার রেশ ধরে মুসলিম নাগরিকদের ওপর লন্ডনে বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। এমনকি হিজাবধারী নারীদের ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটছে। তামিমের লন্ডনে আসার পর কাকতালীয়ভাবে স্টারফোর্ড ট্রেন স্টেশনেই এসিড নিক্ষেপের এমন একটি ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে পূর্ব লন্ডনে চরমভাবে ইসলামপোবিয়া ছড়িয়ে পড়ে।
তামিম এবং তার স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সত্যিকা অর্থে কী ধরনের ঘটনা ঘটেছিল এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নয়। যে টুকু জানা যাচ্ছে, অ্যান্টি রেসিজম মুভমেন্ট চলাকালীন কিছু দুষ্কৃতকারীর সামনে পড়ে যান তামিম এবং তার পরিবার। তারাই ধাওয়া দিয়েছিল এবং হিজাব পরে থাকার কারণে তামিমের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে এসিড মারতে চেয়েছিল তারা। সেখান থেকে দৌড়ে পালিযে বাঁচেন তামিমরা।
ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, এরপরই বিষয়টা নিয়ে তিনি ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের তিনি বলেন, চুক্তি বাতিল করতে। তিনি এমন নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্যে আর লন্ডনে থাকবেন না।
এসেক্সও তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তার সঙ্গে একমত হয়। তবে দু’পক্ষই সিদ্ধান্ত নেয়, কেউই আসল ঘটনা প্রকাশ করবেন না। এমনকি তারা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছেও এ ঘটনার সম্পর্কে কোনো অভিযোগ করেননি। এ কারণে পুলিশও বিষয়টা সম্পর্কে অন্ধকারে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন ঘটনাটা গোপন করছেন তামিম? আবার কেন এসেক্স তামিমের ‘ব্যক্তিগত বিষয়কে সম্মান’ জানানোর কথা বলে এড়িয়ে যেতে চাইছে? বিষয়টা ফেসবুকে দেয়া তামিমের স্ট্যাটাসেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি আবারও লন্ডনে এসে খেলতে চান। কাউন্টিতে খেলা তার খুব প্রিয়। হামলার কথা প্রচার করলে, থানা-পুলিশ ঝামেলা হবে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের টার্গেটে কাউকে ভবিষ্যতে কোনো ক্লাব নিতে চাইবে কি না কিংবা যদি ইংল্যান্ড গিয়ে তামিমের খেলা বন্ধ হয়ে যায়! এ কারণেই মূলত তামিম চান না আসল ঘটনাটা প্রকাশ হোক এবং এ নিয়ে আরও বেশি টানাহেঁচড়া হোক।
ক্রিকইনফো থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে এসেক্সের কাছে। তারা আগের অবস্থান থেকে একচুলও নড়ছে না। তারা বলেই দিয়েছে, যে বিবৃতি আমরা এর আগে দিয়েছি, সেটাকে একচুল পরিমাণও বাড়ানো হবে না। তারা বলেই দিয়েছে, ‘আমরা তামিমের মঙ্গল কামনা করি। আর যদি তামিমের ব্যক্তিগত কোনো বিষয় থাকে, আমাদের সবারই উচিত সেটাকে সম্মান জানানো।’
আইএইচএস/আরআইপি