মতামত

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে প্রয়োজন সতর্কতা

আমাদের দেশে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হয় রাজনীতির হালচালের সাথে। পুঁজিবাজারের গতি-প্রকৃতিও অনেকটা রাজনৈতিক ডামাডোলের ওপর নির্ভরশীল। জাতীয় নির্বাচন আসতে সেই অর্থে খুব বেশি দেরি নেই। এই সময় কেমন যাবে আমাদের অর্থনীতি আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি-এ প্রশ্ন এখনই দেখা দিয়েছে। আর কেমনই বা হবে আমাদের শেয়ার বাজারের অবস্থা-সে প্রশ্নও উঠছে। 

Advertisement

রাজনৈতিক নানা হিসাব কষে অনেকেই না জেনে না বুঝে বাজার বাড়ার কারণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যারা আগে থেকে কম দামে শেয়ার কিনে রেখেছেন তাদের জন্য ভয়ের তেমন কিছু নেই। কিন্তু যারা বাড়তি বাজারে বাড়তি লাভের আশা্য় ঢুকছেন তাদের জন্য রয়েছে আগাম সতর্কতা। বাজেট পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম, নানা ধরনের ঘোষণা, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো, ব্যাংকে ডিপোজিট রাখলে নানা ধরনের সার চার্জ আরোপ- এসব কারণে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ নিরাপদ মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বাজটে শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করার মত তেমন কোন ঘোষণা ছিল না ।  

এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য তেমন কোন পরিবর্তন না আসলেও সামগ্রিক অর্থনীতির পরিবর্তন পুঁজিবাজারে আসছে। এবারে পুঁজিবাজারের সব ধরনের সেবার ফিতে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। এর উন্নয়নে বিগত কয়েক বছরে অনেক সংস্কার হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডাররা সংস্কারের সুফল পেতে শুরু করেছেন। 

বাজারকে আরও গতিশীল করতে পুঁজিবাজারে সেবার সব ধরনের ফিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু বিপর্যয়টা ঠিক সেখানেই। কারণ বাজেট পরবর্তী সময়ে যে পরিমান রাজস্ব আয় করার কথা সেই পরিমাণ আয় করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ উন্নয়ন বাজেটের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ রয়েছে সেখানে ঘাটতি তৈরি হতে পারে। এর প্রধান কারণ বাজেটে শেষ সময় প্রস্তাবিত ভ্যাট থেকে সরে আসার কারণে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ এক লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে। যেই টাকা ভ্যাট দেয়ার ফলে সরকারে কোষাগারে জমা হত। এই বিশাল ঘাটতি মিটাতে সরকারকে হয়তো হিমশিম খেতে হবে। আবার বাইরে থেকে ঋণ পাওয়া ও এই মুহূর্তে সহজ না হওয়ায় প্রয়োজন পড়তে পারে প্রকল্প সংশোধনের। 

Advertisement

শেয়ার বাজার আকস্মিক চাঙ্গা হওয়ার কারণে যারা হঠাৎ করে বাড়তি বাজারে না বুঝে বিনিয়োগ করছেন তাদের জন্য নিতে হবে  সতর্কমূলক ব্যবস্থা। কারণ অনেকেই জানেন না বাড়তি বাজারে তাদের করণীয় কি? বাজার একাধারে বাড়তে থাকলে বাজার সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। আর তখনি বিপর্যয়ে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। হঠাৎ করে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ার কারণে ফিরে আসছে অনেক পুরোনো বিনিয়োগকারীরা। যারা দীর্ঘ সময় বিও একাউন্টে কোন শেয়ার কেনা বেচা করে নি তারাও এগিয়ে এসেছে।কিন্তু মজার বিষয়, যখন শেয়ারের দাম কম ছিল তখন কিন্তু তারা শেয়ার কিনেনি। এখন কেবল তাদের প্রফিট তোলার সময় যারা নিম্নমুখি বাজারে বিনিয়োগ করেছিল আর এখন লাভ তুলে নিচ্ছে। সুসময় তাদেরই যারা পড়তি বাজারে ভালো শেয়ারে লেনদেন করেছে।

আবার অনেকে ব্যাংকে সুদের হার কমে যাওয়ার কারণেও  পুঁজিবাজারে নতুন করে টাকা নিয়ে আসছেন। বিপদ তাদেরও হতে পারে যদি না বুঝে অতিরিক্ত বাড়তি বাজারে লেনদেন করেন। আবার অনেকে সঞ্চয় পত্রে সুদের হার কমে যাওয়ার কারণেও নতুন করে টাকা নিয়ে আসছেন পুঁজিবাজারে।আর একারণে বাড়ছে শেয়ারের চাহিদা। শেয়ারের চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বাড়ছে অনেক শেয়ারের। আর এদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও বাজারের প্রতি চাহিদা বাড়ছে। সবার যৌক্তিক আচরণের মাধ্যমে বাজার যাতে নেতিবাচক দিকে না যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রয়োজনে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আর যারা বাজারে অর্থলগ্নি করছেন তাদের ভেবে দেখা দরকার আপনি না বুঝেই আবার পুঁজিবাজারে অর্থ হারাচ্ছেন না তো? নিজের শেয়ার নিজে কিনুন, বুঝে কিনুন। কেনার আগে মাথায় রাখুন দেশের ও দেশের বাইরের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা বিষয়। কারণ পুঁজিবাজার খুবই স্পর্শকাতর।

লেখক :  বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা। একাধারে সাংবাদিক, লেখক, সংবাদপাঠিকা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালক। এছাড়াও অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার বিষয়ে রয়েছে তার সংবাদ ও টেলিভিশন টক শো।  সদস্য, এফবিসিসিআই।  কো-চেয়ারম্যান এসএমই, পাট, ইয়াং এন্টারপ্রাইনার ও পুঁজিবাজার বিষয়ক স্টান্ডিং কমিটি। বর্তমানে এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের সার্টিফাইড প্রশিক্ষক এবং উদ্যোক্তা।

Advertisement

এইচআর/পিআর