দেশজুড়ে

ঝুঁকিপূর্ণ ব্রহ্মপুত্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে বাঁধটির উপর দিয়ে চলাচলে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাঁধটি ভাঙনের আশঙ্কায় নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

Advertisement

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলাকে বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৬২ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধটির সীমানা ব্রহ্মপুত্র নদের জেলার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়ন থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত। বন্যার সময় জরুরি মেরামত ছাড়া দীর্ঘদিনেও কোনো মেরামত কাজ না করায় বাঁধের অনেকগুলো স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে ব্রহ্মপুত্রের বন্যায় গাইবান্ধা অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। সে সময় নিম্নাঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ গাইবান্ধা শহরও কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৬৪ ও ১৯৬৮ সালেও এই জেলায় ব্যাপক বন্যা হয়েছিল।  পরেও ১৯৭৪, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সরেজমিনে বাঁধটির ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের সিংড়িয়া এলাকা থেকে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বাগুড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা গেছে, নদী ভাঙনের শিকার  কয়েক হাজার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধ ও বাঁধের নিচের অংশে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় বাঁধটিতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Advertisement

বাঁধের উপর সারি সারি করে রাখা হয়েছে খড়ের গাদা। গবাদিপশু সবসময় বেঁধে রাখা হয় বাঁধের উপর। নিচু জায়গাগুলোতে বস্তায় মাটি ও বালুভর্তি করে বাঁধে দেয়া হয়েছে। বাঁধটির কাঁচা রাস্তায় ট্রলি চলাচল করায় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাঁধের উপর দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অসংখ্য জায়গায় বাঁধটির উপর মাটি কমে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে।

বাঁধটিতে আশ্রয় নেয়া ও নদী সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টি ও বন্যায় বাঁধটির মাটি ক্ষয়ে গেলেও কখনো স্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়নি। ফলে বাঁধটির অনেক স্থানের মাটি বৃষ্টি ও বন্যায় ধসে গিয়ে অনেক নিচু ও সরু হয়েছে। বাঁধটির অনেক অংশ দিয়ে বাইসাইকেল-মোটরসাইকেল ছাড়া রিকশা-ভ্যান চলাচল করতে পারে না।

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য উড়িয়া গ্রামের মো. হাসমত আলী (৭৫) বলেন, বাঁধটি নির্মাণের সময় আমি শ্রমিকের কাজ করেছি। নদীতে সহায় সম্বল হারানোর পর এই বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। এরপর আর দীর্ঘদিনেও কোনো মেরামত কাজ করা হয়নি। শুধুমাত্র বন্যা এলে জরুরিভাবে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলা হয়।

একই গ্রামের মো. মুনজুর আলম (৩৫) বলেন, কেবলমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ যে স্থানটি দিয়ে পানি উপচে যেত সেখানে মাটি ফেলে সাময়িকভাবে উঁচু করা হতো। বাঁধটি নির্মাণ করার পর বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরিকল্পনা করে কখনো মেরামত কাজ করা হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ মেরামত না করে বর্ষাকালে বাঁধ মেরামত করার ফলে তা ধসে গিয়ে সরকারের টাকা পানিতে যাচ্ছে।

Advertisement

এ দিকে গত শনিবার গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল মোটরসাইকেলে বাঁধটির গাইবান্ধার অংশের ৫৫ কিলোমিটার অংশ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে বাঁধটির কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার বলেন, নদী ভাঙনের শিকার মানুষজন বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে গোটা বাঁধ জুড়ে গড়ে উঠেছে ঘনবসতি। বাঁধটির প্রস্থ হয়ে গেছে ছোট। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বাঁধটি সংস্কার না হওয়ায় চলাচলে মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন বাঁধটি পাহারা দিচ্ছে। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলির উপর বিশেষ নজর দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যেখানেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেখানেই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে। ১০ কিলোমিটার বাঁধ সংষ্কার করার একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেছে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জাগো নিউজকে বলেন, জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হওয়ায় বাঁধটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে। বাঁধটি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধটি সংরক্ষণের জন্য বাঁধে আশ্রয় নেয়া ও নদী নিকটবর্তী গ্রামের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

রওশন আলম পাপুল/আরএআর/জেআইএম