১৮ তে পা দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারের ‘অনাথ’ হাবিবা। বাবা-মাকে হারিয়ে ১০ বছর আগে সরকারি শিশু পরিবারে আসা হাবিবা এখন আর স্বজনহারা নয়। হাবিবার ‘বাবার’ ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ১৪ জুলাই হাবিবার বিয়ে।
Advertisement
তোড়জোড়ে চলছে হাবিবাকে নববধূ সাজানোর প্রস্তুতি। বাবা হিসেবে মেয়ের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা করেছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
অন্য আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের বিয়ের মতো নয়, অনেকটা রাজকীয় হালেই হতে যাচ্ছে হাবিবার বিয়ে। আলোচিত এ বিয়ের কথা এখন সবার মুখে মুখে। হাবিবার বিয়েকে ঘিরে তার দীর্ঘদিনের আবাসস্থল সরকারি শিশু পরিবারেও এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার কসবা উপজেলা সোনাগাঁ গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা পুলিশ কনস্টেবল মো. জাকারিয়া আলমের সঙ্গে ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হাবিবার বিয়ে। এ বিয়েতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত থাকবেন।
Advertisement
হাবিবার বিয়ের সব খরচের জোগান দিচ্ছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। হাবিবার সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য জাকারিয়াকে পুলিশে চাকরির ব্যবস্থাও তিনিই করেছেন। ইতোমধ্যে হাবিবার বিয়ের জন্য ছাপানো দাওয়াতপত্র বিতরণ শেষ হয়েছে।
সরকারি শিশু পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি শিশু পরিবার ছাড়তে হচ্ছে হাবিবাকে। তাই হাবিবাকে পুনর্বাসনের জন্য শিশু পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হাবিবার বিয়ের জন্য ভালো ছেলের সন্ধান পেলে তার চাকরির ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন তিনি। পরে হাবিবার জন্য পছন্দ করা পাত্র জাকারিয়াকে সম্প্রতি জেলা পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন পুলিশ সুপার। পরবর্তীতে হাবিবার বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বও নিজ কাঁধে তুলে নেন তিনি।
সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা জানান, হাবিবার বিয়ের আয়োজনসহ সবকিছুই এসপি মিজানুর রহমান করছেন। হাবিবার এ বিয়ে সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শিশু পরিবার ছেড়ে দিতে হবে ভেবে হাবিবা অনিশ্চয়তায় ভুগছিল। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হাবিবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করব। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে ভালো পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য একটি ছেলেকে পুলিশের চাকরি দেয়া হয়েছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে অসহায় হাবিবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। হাবিবার মতো অন্য কেউ যদি এমন সমস্যায় পড়ে আমরা তার পাশেও দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারে ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ ও একই স্থানে ১৪ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টায় হাবিবার বিয়ের অনুষ্ঠান। এখানে বর যাত্রীসহ প্রায় তিন শতাধিক অতিথি উপস্থিত থাকবেন। সন্ধ্যায় এসপি মিজানুর রহমান তার সরকারি বাংলো থেকে হাবিবাকে তার বরের হাতে তুলে দেবেন।
বিয়েতে অতিথিরা যেসব উপহার দিচ্ছেন
হাবিবার বিয়েতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল সোনার গহনার সেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরি বর-কনের থাকার জন্য ঘর নির্মাণ করে দেবন। এছাড়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উপহার হিসেবে দেয়া হবে আরও স্বর্ণালংকার, টিভি-ফ্রিজসহ নানান আসবাবপত্র।
খাবার ম্যানু
হাবিবার বিয়েতে বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য খাবারের ম্যানুতে থাকছে ৮ পদের খাবার। এর মধ্যে রয়েছে মুরগির রোস্ট, পোলাও, টিকা, গরুর মাংস, সবজি, ডাল, সালাদ ও মিষ্টি।
এফএ/আরএস