‘অ্যাই যে পানি পার দশ টাকা, পানি পার দশ টাকা।’ বুধবার (১২ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের দক্ষিণ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এভোবেই কোরাস সুরে পানি পারাপারের জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন একাধিক ভ্যানচালক। কবরস্থান গেটের সামনে অসংখ্য মানুষ জটলা বেধে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ অফিসে, কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কেউবা গার্মেন্টস বা ব্যক্তিগতভাবে কাজে বেরিয়েছেন। কিন্তু কবরস্থান গেটের সামনে এসে সবাই থমকে দাঁড়িয়েছেন।
Advertisement
কবরস্থান গেট থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। যেন অচেনা কোনো এক নদী। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ ইঞ্জিনচালিত যানবাহনগুলো দ্রুত চলে যাওয়ার সময় দু’পাশে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এ ছাড়া নিউমার্কেট সংলগ্ন বড় ডাস্টবিনের ময়লা পানিতে ভাসছে। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে এক মিনিটের পায়ে হাটার পথ ১০ টাকা দিয়ে পার হচ্ছেন। আবার কেউ জামা কাপড় ভিজিয়ে গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছেন। রাস্তার ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো খুলে দিয়ে পানি অপসারনের ব্যর্থ চেষ্টাও দেখা যায়।
কবরস্থানের গেটে দাঁড়িয়ে সিটি মেয়রের সমালোচনা করছিলেন আনুমানিক ষাট বছরের এক বৃদ্ধ। বলছেন, ‘মেয়র সাহেব তো বক্তৃতায় নগর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু কই এই যে জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার মানুষের দুভোর্গ হচ্ছে এর সমাধান তো করতে পারছেন না। নিউমার্কেটের মতো এলাকায় যদি এমন পানি জমে থাকে তবে কী যে উন্নয়ন হচ্ছে তা সহজেই বোঝা যায়।’
এদিকে, গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষদের জন্য টাকার বিনিময়ে সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন ভ্যানচালকরা। অন্যদিকে এক মিনিটের রাস্তা পার হতে জনপ্রতি গুণতে হচ্ছে ১০ টাকা।
Advertisement
কবরস্থান গেট সংলগ্ন আইয়ুব আলী কলোনীর জামাল নামে একজন কেয়ারটেকার জানান, ভোর বেলা ভ্যানচালকরা জনপ্রতি পাঁচ টাকায় নীলক্ষেত পর্যন্ত পারাপার করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে রেট দ্বিগুণ অর্থাৎ দশ টাকা করে ফেলেন।
রিপন নামের এক ভ্যানচালক বলেন, ‘এমনিতেই ভ্যান চালানো আর পানি ঠেইল্যা মানুষ ভর্তি ভ্যান চালানোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। তাছাড়া ডাস্টবিনের সব ময়লা পানিতে মিইশ্যা ভেজা পা খালি চুলকাইতেছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রি হলের ছাত্রী রোকেয়া সুলতানা জানান, এখন কবরস্থানের সামনে পানি দেখা গেলেও ভোরে তাদের হলের সামনে হাটু পানি ছিল। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নগরপিতার কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এ অবস্থা থেকে কী নগরবাসী পরিত্রাণ পাবে?
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। রেকর্ড পরিমাণেএ বৃষ্টিপাতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। আর এর ফলে দুভোর্গের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তীব্র যানজট। আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, বৃষ্টিপাতের এ ধারা আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
Advertisement
এমইউ/আরএস/এমএস