জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডে সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে হারের পর রাগে-দুঃখে, অপমানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। শুধু ওয়ানডেতেই নয়, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকেও লঙ্কান ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব না করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
Advertisement
পদত্যাগের ঘোষণা দিতে গিয়ে ম্যাথিউজ বলেন, জিম্বাবুয়ের কাছে এই হার আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ঘটনা। জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর তিনি নির্বাচকদের সঙ্গে অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা বলেন এবং তাদেরকে রাজি করাতে সক্ষম হন যে তিনি আর নেতৃত্বে থাকবেন না।
অধিনায়ক হওয়ার পর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ শ্রীলঙ্কাকে ৩৪টি টেস্ট, ৯৮টি ওয়ানডে এবং ১২টি টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দেন। ২০১৩ সালে ২৫ বছর বয়সে নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব কাঁধে নেন তিনি।
ম্যাথিউজের নেতৃত্বের ক্যারিয়ারটা ছিল শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে খুবই সংকটকালীন মুহূর্ত। কারণ, এই সময়টাকে বলা হচ্ছিল লঙ্কান ক্রিকেটের ট্রানজিশন পিরিয়ড। তার নেতৃত্বের প্রথম অংশটা ভালোভাবে শেষ হলেও শেষ অংশটা ছিল অনেকটাই ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। তবুও ম্যাথিউজের একক ণৈপুন্যে বলা যায় ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে সাফল্য পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তার নেতৃত্বেই গত বছর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল তারা।
Advertisement
তবুও ম্যাথিউজের নেতৃত্বের সময়ই ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে শুরু করে লঙ্কান ক্রিকেট। ২০১৫ বিশ্বকাপ, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি- সবগুলোতেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে লঙ্কানরা। টেস্ট ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ০-২, দক্ষিণ আফ্রিকায় ০-৩ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তারা। অধিনায়ক হিসেবে ১৩টি জয়ের বিপরীতে তিনি হেরেছেন ১৫টি।
ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০১৪ সালটা দুর্দান্ত কেটেছিল ম্যাথিউজের। এই বছরে ৮৭.৮ গড়ে তিনি রান করেছিলেন ১৩১৭। আর অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ৫০.৯৪ করে। বল হাতে টেস্টে যতটা কার্যকর, তার চেয়েও বেশি কার্যকরী ওয়ানডে ক্রিকেটে।
গত বছরটা তার কেটেছে পুরোপুরি ইনজুরিতে। যে কারণে তিনি জিম্বাবুয়ে সফরে ২ টেস্ট এবং ত্রিদেশীয় সিরিজ মিস করেছিলেন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ফরম্যাটেই হোম সিরিজে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইনজুরির কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি।
ম্যাথিউজের নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি একেবারেই অনাকাংখিত ছিল না। কারণ, তার নেতৃত্বে দলের যে অধঃপতন ঘটছিল, তাতে শ্রীলঙ্কা দলে যে কোনো সময় একটা পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দিচ্ছিল। তারওপর ধারাবাহিকত ব্যর্থতা ম্যাথিউজের ওপর দারুণ চাপ তৈরি করেছিল। শেষ পর্যন্ত যে জিম্বাবুয়ের কাছে ঘরের মাঠে কখনও পরাজয়ের স্বাদ পায়নি শ্রীলঙ্কা, সেই জিম্বাবুয়েই যখন তাদেরকে সিরিজ হারিয়ে দিল তখন ম্যাথিউজ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন এটা অনুমিতই ছিল। অবশেষে তাই ঘটলো।
Advertisement
এখন দেখার বিষয়, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের পরবর্তী অধিনায়ক কে হচ্ছেন? কার হাত ধরে আবারও কক্ষপথে ফিরে আসতে পারবে লঙ্কান ক্রিকেটের ঐতিহ্য এবং গৌরব।
আইএইচএস/এমএস