মতামত

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।বন্যার পানি উপচে তিস্তাতীরবর্তী নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম গাইবান্ধাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে লাখো মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।  ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বেড়ে যায় তিস্তার পানি। এতে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সব কটি গেট খুলে দেয় তারা। ফলে ভাটিতে থাকা বাংলাদেশে পানি আসতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট জেলার ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

Advertisement

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেখা দেয় খাদ্য, পানি ও জ্বালানির সংকট। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার পরিবার। এ অবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, জরুরি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমসহ নানামাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্যার্ত মানুষ যেন কোনো অবস্থায়ই দুর্ভোগে না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্গত এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে শত শত একর ফসলি জমি। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় শ্রমিকদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব অতিদ্ররিদ্র শ্রেণির মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। 

বন্যা আমাদের দেশে নতুন নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আঞ্চলিক ও স্থানীয় অতিবৃষ্টি ও ভৌত অনেক কারণ বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার জন্য দায়ী। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বন উজাড়করণ এই প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে বলে গবেষকরা প্রায় নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। ভৌত কারণগুলোর মধ্যে সম্প্রতি হিমালয়ে অস্বাভাবিকভাবে বরফের আস্তরণ গলে যাওয়া, নদী-উপনদী ও খালগুলোর পানি নির্গমন ক্ষমতা বিভিন্ন কারণে হ্রাস পাওয়া, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ও নির্বিচারে বন উজাড় হওয়া অন্যতম।

এ ছাড়া গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার একটি বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশকে বছরের পর বছর বন্যায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কখনো কখনো এই বন্যা সহনীয় মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকছে কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা ভয়াল আকার ধারণ করছে। প্রায় ২৩০টি নদী একটি জটিল জালের মতো বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে ৫৭টি নদী আন্তদেশীয়, যেগুলো চীন, ভুটান, নেপাল ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলোর প্রবাহের ৯০ শতাংশেরও বেশি উল্লিখিত উজানের দেশগুলোতেই রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ এই নদীগুলোর পানি বহির্গমন পথের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হয়ে নদী-বাস্তুসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা থেকে শুরু করে নানাভাবেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু অভিযোগ আছে এসব কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির। ফলে প্রতিবছরই বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নদীগর্ভে হারিয়ে যায় ফসলের মাঠ, ঘরবাড়ি ও জমিজমা।

Advertisement

বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতিও অনেক প্রাণহানি ও সম্পদের বিনাশ থেকে রক্ষা করতে পারে। বন্যার সময় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এ জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ রাখতে হবে। সময়মতো ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ করাও অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া বন্যার পানি চলে যাওয়ার পরও দেখা দেয় ডায়রিয়াসহ  নানা রোগব্যাধি। এ জন্য খাওয়ার স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। বন্যার্তদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রশাসনকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। মানুষজন যেন বন্যাজনিত কারণে কোনো দুর্ভোগের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করাটাই এই মুহূর্তের জরুরি কর্তব্য। 

এইচআর/এমএস