খেলাধুলা

ক্রিকেটারদের অসামাজিক কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বিসিবি

সুনাম-সুখ্যাতি বেড়েছে বেশ। এক সময়ের তলানিতে থাকা বাংলাদেশ এখন ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের ছয়-সাত নম্বরে উঠে এসেছে। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে খেলতে মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার মতো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পেছনে ফেলে এখন র‌্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে।

Advertisement

সেটাই শেষ নয়। আজকাল বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বিশ্ব আসরের সেমিফাইনাল ও কোয়ার্টার ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। সব মিলে টাইগাররা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ধারাবাহিক। নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে বড় বড় সাফল্য তুলে নিয়ে এখন সবার প্রশংসাধন্য ‘টিম বাংলাদেশ।’

মোদ্দাকথা, ক্রিকেট বিশ্বে দল হিসেবে বাংলাদেশ অনেক বেশি সমাদৃত। অবস্থানও বেশ সমৃদ্ধ। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো হচ্ছে। তামিম, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরা এখন বিশ্ব আসরেও মাঠ মাতাচ্ছেন। তাদের পারফরম্যান্সের দ্যুতি শুধু আলোই ছড়াচ্ছে না, প্রতিপক্ষ দলগুলোও খাবি খাচ্ছে।

কিন্তু কিছু ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত আচরণ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ওই সাফল্যে কালো চিহ্ন এঁকে দিচ্ছে। ক্রিকেটারদের কেউ কেউ দিনকে দিন অনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্ক্যান্ডাল, উশৃঙ্খল আচরণ আর অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছেন। তাতে করে দেশের ক্রিকেট হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ। ক্রিকেটাররা ইমেজ সঙ্কটে পড়ছেন।

Advertisement

সাম্প্রতিক সময়গুলোয় যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অমন কর্মকাণ্ড। প্রথমে রুবেল হোসেনের নারী কেলেঙ্কারি। তার রেশ না মিটতেই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ চলাকালীন শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পেসার আল-আমিনকে দেশে ফেরত পাঠানো। এরপর পরই শাহাদাত হোসেন রাজিবের বাসায় শিশু পরিচারিকার ওপর অমানবিক আচরণ।

সে ঘটনা শেষ না হতেই সাব্বির রহমান রহমান রুম্মনকে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা। সেখানেই শেষ নয়। নারীর সন্মানহানির অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত আরাফাত সানি। আর সবশেষ মোহাম্মদ শহীদের বিরুদ্ধে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া এবং স্ত্রী ও সন্তানদের ভরন-পোষণ না করার অভিযোগ এনেছেন তার স্ত্রী।

ওপরের সবগুলো ঘটনা দেশে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে। ক্রিকেটারদের ইমেজ হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণ মানুষের কাছে যারা রীতিমতো নায়কের আসনে আসীন, তারা শুধু নিন্দিত, ধিকৃতই হননি। তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা কথাবার্তাও চারদিকে। একটা দল ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। মাঠে ভালো খেলে উঠে আসছে। আর সেই দলের ক্রিকেটারদের কেউ কেউ অমন অসামাজিক কাজ এবং শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।

যা শুধু টিম বাংলাদেশের গায়ে কালো চিহ্নই নয়, এ অনৈতিক আচরণ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে এক সময় দলের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। যার প্রভাবে টিম পারফরম্যান্স হবে ক্ষতিগ্রস্ত। সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীদের দাবি, ক্রিকেটারদের এমন বলগাহীন চলাফেরা, অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়া ও অনৈতিক পথে হাটা বন্ধ হওয়া জরুরি। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক হিসেবে বিসিবিকেই সে কাজ করতে হবে।

Advertisement

ক্রিকেটাররা বিশেষ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যাতে নারী কেলেঙ্কারি, অসামাজিক কাজে লিপ্ত আর অনৈতিক কাজকর্ম করতে না পারেন, সে ব্যাপারে বাড়তি সচেতনতা আর কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে। আজ শেরেবাংলায় মিডিয়ার সামনে আসা বিসিবি বিগ বস নাজমুল হাসান পাপনের কাছেও ছুড়ে দেয়া হলো প্রশ্ন, ক্রিকেটারদের এমন নেতিবাচক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড এবং নানা স্ক্যান্ডাল কি বিসিবিকেও বিব্রত করছে না?

যদিও সেগুলো ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবনের অংশ, তারপরও তাদের অভিভাবক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সেসব অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধে আদৌ কোনো পদক্ষেপ কি নিচ্ছে? এমন প্রশ্নর জবাবে বিসিবি প্রধান অনেক কথাই বলেছেন। তবে তার সারমর্ম হলো, অচিরেই কঠোর আইন চালু হচ্ছে। অসামাজিক কাজে জড়ালে, অনৈতিক পথে হাঁটলে বা কোনো রকম স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়লে আর রক্ষা নেই। বোর্ড কঠোর হস্তে তা বন্ধ করবে।

তাইতো নাজমুল হাসান পাপনের মুখে এমন কথা, ‘যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা হলেও আমাদের সবার কাছেই তা দৃষ্টিকটু। আমরা কখনই সেসব নেতিবাচক আচরণ ও অসামাজিক কাজকর্ম সমর্থন করিনি। যা ঘটছে, তা আমাদের নজরে আছে। আমরা নিবিড়ভাবে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। আগে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তার একটিও আমরা সমর্থন করিনি। প্রতি ঘটনায়ই আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। ওই সব বিষয়ে আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর। আমরা এখনো তেমন কঠোরই হব। থাকব। আমরা কায়মনে চাই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আর যদি না যায়, তবে ভবিষ্যতে অনেক বেশি কঠোর অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হবে।

বিসিবি বিগ বসের শেষ কথা, আমার কাছে শুধুই যে একজন ভালো খেলোয়াড়ের মূল্য আছে, তা নয়। আমি মনে করি, একজন ভালো খেলোয়াড়কে একজন ভালো মানুষও হতে হবে। সেজন্যই আমরা ক্রিকেটারদের নেতিবাচক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

আমাদের তত্ত্বাবধানে যখন ক্রিকেটাররা হোটেলে থাকে, তখন অনেক বেশি কঠোর হয়েছি। সমস্যা হচ্ছে, যখন মাঠের খেলা শেষে ক্রিকেটাররা বিশ্রামে চলে যাচ্ছে, তখনই ওইসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ওইসব ব্যক্তিগত বিষয়গুলো তখন ধরতে পারছি না।

এআরবি/এনইউ/জেআইএম