কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Advertisement
নতুন এ মুদ্রানীতি তৈরিতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বৈঠকে আসা পরামর্শের আলোকে তৈরি করা হবে নতুন মুদ্রানীতি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৩ জুলাই প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) প্রথমার্ধের নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকদের নিয়ে বৈঠক করেন গভর্নর ফজলে কবির। এর ধারাবাহিকতায় রোববার (৯ জুলাই) নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন বিষয়ে মতামত নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের।
Advertisement
আসন্ন মুদ্রানীতি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সামনে যে মুদ্রানীতি আসবে তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জই হবে। কারণ বর্তমানে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় নেতিবাচক ধারায় রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে। এছাড়া যে হারে বাজারে লোক আসছে সেই হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তাই কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, রেমিট্যাস ও রফতানির নেতিবাচক ধারার এক বিশেষ কারণ এক্সচেঞ্জ রেট খুবই শক্তশালী। এ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ এক্সচেঞ্জ রেট সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। খেলাপি ঋণ কমানোর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
মুদ্রানীতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত অর্থবছরে মূলধনীয় যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উৎপাদন দৃশ্যমান হয়নি। তাই উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ওপর জোর দেয়া হবে। বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রতি। এছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের ঘোষণা থাকবে নতুন মুদ্রানীতিতে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকবে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর ইঙ্গিত।
Advertisement
এছাড়া চালের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হবে। বিশেষ করে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। যাতে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে।
বর্তমান পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকুক তা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই নতুন মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের বিষয়ে কিছু না রাখার পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আসছে নতুন মুদ্রানীতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিনিয়োগবান্ধব ও প্রবৃদ্ধিসহায়ক মুদ্রানীতি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ সরকারি খাতে বিনিয়োগ হলেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। এটা বাড়াতে হবে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য রয়েছে, বিনিয়োগ পরিস্থিতি যদি চাঙা করা না যায় তাহলে তা অলস পড়ে থাকবে।
সুদহার সমন্বয়ের ওপর জোর দেয়া উচিত। কারণ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ও বাজারের সুদহারের পার্থক্য অনেক। তা কমানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারকে ম্যাসেজ দেয়া, একই সঙ্গে এক্সচেঞ্জ রেট বিষয়েও মুদ্রানীতিতে নির্দেশনা থাকা দরকার বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
সরকারের নির্ধারিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সামনে রেখে মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন প্রাক্কলন করা হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত গড় বার্ষিক ভোক্তামূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বসীমা ধরা হয় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময় শেষে তা ছিল পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে ঋণ বেড়েছে ৮৬ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দু’বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। ছয় মাস অন্তর এ মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাইয়ে এবং অন্যটি জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।
দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
এসআই/এমএআর/জেআইএম