পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) বিরুদ্ধে আগামী ২৮ আগস্ট চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য করেছে শ্রম আদালত। মৃত শ্রমিকদের বীমা দাবির টাকা আদায়ে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে এ চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য করা হয়।
Advertisement
সোমবার শুনানি শেষে প্রথম শ্রম আদালতের বিচারক তাবাসসুম ইসলাম চার্জ গঠন সংক্রান্ত আদেশ দেন। চার্জ গঠনের পরপরই বীমা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. এবিএম জাফর উল্লাহ ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের বিচার শুরু হবে। গোষ্ঠী বীমার আওতাভুক্ত মৃত শ্রমিকদের বীমার টাকা নিয়ে টালবাহানা করায় বীমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে ৫টি মামলা করে বিকেএমএই’র সদস্যরা।
অবন্তি কালার টেক্সটাইল লিমিটেডের মালিক এ এইচ আসলাম সানি, এমবি নীটফ্যাশনের মালিক মোহাম্মদ হাতেম, রূপসি নীটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার্দী, মডেল ডিক্যাপিট্যাল লিমিটেডের মালিক মাসুদুজ্জামান ও মিনার ইন্ড্রাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক পৃথকভাবে মামলার বাদী।
বিকেএমই’র সদস্যভুক্ত কারখানার শ্রমিকদের বীমা সুবিধা দিতে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে গ্র্রুপ বীমার চুক্তি করে বিকেএমইএ। কিন্তু শর্ত অনুসারে শ্রমিকদের বীমা দাবির টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করে বীমা কোম্পানিটি। মৃত্যু দাবির টাকার জন্য তারা গত তিনবছর ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাতে কোনো ফল হইনি।
Advertisement
মামলার আবেদনে বলা হয়, ১৫৫ শ্রমিকের দাবি বাবদ ৩ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎকরার পাঁয়তারা করছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দাবি টাকা না পেয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর বাইরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও এই মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অভিয়োগ দেয়া হয়েছে। একইভাবে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলায় প্রত্যেক শ্রমিকের গ্রুপ বীমা দাবি বাবদ দুই লাখ টাকা পরিশোধসহ বিলম্বিত সময়ের জন্য ব্যাংক রেটের ওপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে মাসিক ভিত্তিতে সুদ পরিশোধ করার আদেশ প্রার্থনা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে মামলা পরিচালনার খরচ এবং মৃত শ্রমিকের মৃত্যু দাবির টাকা না পাওয়ায় তার পরিবারের সদস্যদের দুঃখ কষ্টের ক্ষতিপুরণ পরিশোধ করার আদেশ প্রার্থনা করেছেন মামলার বাদী বিকেএমইএ'র যুগ্ম সচিব (ফায়ার এ্যান্ডআর্বিট্রেশন) মোহাম্মদ মানিক মিয়া।
Advertisement
জানা গেছে, বিকেএমইএ'র অভিযোগ অযৌক্তিক ও বেআইনি প্রশ্ন তুলে গ্রাহকের প্রাপ্য টাকা না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে বীমা কোম্পানিটি। অথচ মৃত শ্রমিকের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিকভাবে সুবিধা দিতেই গ্রুপ বীমার এ চুক্তি করা হয়েছে। বীমা কোম্পানিটির অসহযোগিতা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে আজও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কোনও টাকা পায়নি।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে বীমা চুক্তির মাধ্যমে বিকেএমইএ'র সদস্যভুক্ত সকল ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শ্রমিকদের জীবন গ্রুপ বীমার আওতাভুক্ত হয়, যা ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত কার্যকর। এরপর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি আরেকটি চুক্তি করা হয়, যা ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত কার্যকর।
উভয় বীমা চুক্তির শর্ত অনুসারে,বিকেএই’র প্রতিটি সদস্য কারখানার জন্য বছরে সর্বোচ্চ ২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু দাবি পরিশোধযোগ্য। এক্ষেত্রে যেকোনো সদস্যের যেকোনো প্রকার মৃত্যুতে ২ লাখ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। দুর্ঘটনার কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করলেও একই সুবিধা প্রদান করা হবে।
যে সমস্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শ্রমিক বিকেএমইএ'র সদস্যভুক্ত নিটওয়ার ফ্যাক্টরির অধীনে পূর্ণকালীন চাকরিতে নিয়োজিত, সুস্থ এবং যাদের বয়স পরবর্তী জন্মদিনে ৬০ বছর উত্তীর্ণ হবে কেবল তাদের জীবন এই চুক্তিনামার আওতাভুক্ত রাখা হয়। তবে কোনও সদস্যের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চুক্তিনামার আওতায় আসবে না বলে বীমা চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
২০১৫ সালের বীমা চুক্তিতে প্রতি সদস্যের বীমাকৃত অর্থের হাজার প্রতি বার্ষিক প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করা হয় ৮ টাকা ৭৫ পয়সা এবং প্রতি ইউনিটের বার্ষিক প্রিমিয়াম ৩৫ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৪ সালের চুক্তিতে বীমাকৃত অর্থের প্রতি হাজার টাকার জন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ৬ টাকা ২৫ পয়সা হারে। এক্ষেত্রে প্রতি ফ্যাক্টরির জন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় ২৫ হাজার টাকা। কোনও ফ্যাক্টরির সদস্যদের তালিকা সরবরাহের পর প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রক্রিয়ার জন্য বিকেএমইএকে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় দেয়া হয়।
বীমা চুক্তির শর্ত অনুসারে, বিকেএমইএ’র সদস্য কারখানায় চাকুরিরত কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হলে সে শ্রমিক বীমা দাবি পাবে। এক্ষেত্রে পদ্মা ইসলামী লাইফের কাছে জমা করা সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিক তালিকায় মৃত শ্রমিকের নাম থাকা বাধ্যতামূলক। সকল মৃত্যু দাবি উত্থাপন করার পর ১৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করা হবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এমএএস/ওআর/আরআইপি