লোকচক্ষুর আড়ালে কতই না মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। সেগুলো আবার সামনে চলে এলে মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। তেমনি একটি ঘটনা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবাইশা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহিম হোসেনের পরিবারে। তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে মুক্তা মনি বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত। এজন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে লুকিয়ে রাখতো। অন্য কারও সামনে যেতে দেয়া হতো না তাকে।
Advertisement
অবশেষে ঘটনাটি প্রকাশ পাবার পর তোলপাড় শুরু হয় মিডিয়া পাড়ায়। সেই কিশোরীকে সংবাদ প্রকাশ করে জাগোনিউজ২৪.কমও। সংবাদটি মানুষের মনকে নাড়া দেয়।
এদিকে, জাগো নিউজের সংবাদের পর খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে অনুরোধক্রমে নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপরই সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন মো. তাওহিদুর রহমান সরেজমিন মুক্তা মনির বাড়িতে যান। চিকিৎসার জন্য তাদের নিয়ে আসেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে।
বর্তমানে হাসাপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন মুক্তা। সেখানে রয়েছেন তার বাবা ইব্রাহিম গাজী, মা আসমা খাতুন, চাচা আহসান হাবিব, মুক্তা মনির যমজ বোন হীরা মনি ও ছোট ভাই মিকাইল গাজী।
Advertisement
সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন হাসপাতালে গিয়ে মুক্তা মনির চিকিৎসা সেবা ও পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজখবর নেন ও মুক্তা মনিকে দেখেন। এ সময় সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন . তাওহিদুর রহমান, জাগো নিউজের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আকরামুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তা মনির চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন মো. তাওহীদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় লিখিতভাবে বিষয়টি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানিয়েছেন। বিষয়টি অবগত হয়েই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেয়াসহ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে মুক্তা মনির প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হবে। পরবর্তীতে খুলনা ডিজি মহোদয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।
চিকিৎসা সম্ভব কিনা বা কি ধরনের রোগ এটি এমন প্রশ্নে সিভিল সার্জন মো. তাওহিদুর রহমান বলেন, এটা হাইপারক্রাইটোসেস হতে পারে বা ক্যান্সারও হতে পারে। তবে তার চিকিৎসা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে রোগীর আক্রান্ত ডান হাতটি কেঁটে ফেলতে হতে পারে।
Advertisement
এদিকে, জাগো নিউজের সংবাদটি নজরে আসে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের। তিনি ইতোমধ্যে মুক্তা মনির চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব নিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের একান্ত সচিব শামীম আহমেদ জাগো নিউজকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল রোববার লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর সাড়া পড়ে যায় দেশ-বিদেশে। অসংখ্য মানুষে জাগো নিউজের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন কিশোরী মুক্তাকে সাহায্য করার জন্য।
আকরামুল ইসলাম/এমএএস/এমএস