গ্রেফতার আতঙ্কে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিলেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন।
Advertisement
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এএনএম বশির উল্লাহ’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জারি করা এক নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার হতে পারেন- এমন আশঙ্কা থেকে সাবেক এ বিচারপতি জামিনের আবেদন করেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
Advertisement
আদালতে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান কবির।
মনিরুজ্জামান কবির পরে সাংবাদিকদের বলেন, দুদক তাকে গ্রেফতার করতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে তিনি জামিনের আবেদন করেছিলেন। শুনানি শেষে আদালত তাকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন।
জামিন আবেদনে বলা হয়, নোটিশের পর তিনি দু’বার দুদকে হাজির হন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এরপরও একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলা না হলেও দুদক তাকে গ্রেফতার করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে গ্রেফতারের আশঙ্কায় জামিন আবেদন করছি। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠায় দুদক। পরে ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি ২০১০ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের শুনানিতে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দেন।
সাত বছর পর পুনরায় ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে- এমনটি উল্লেখ করে তার বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে গত ২ মার্চ চিঠি দেয় কমিশন।
Advertisement
এর জবাবে গত ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে। কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া তার প্রাথমিক তদন্ত বা অনুসন্ধান না করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
গতকাল রোববার চলতি সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনে সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠির কড়া সমালোচনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিলের রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান বিচারপতি সিনহার দ্বারা গুরুতর অসদাচরণের কথাই আমার বলতে হয়। কয়েক মাস আগে প্রধান বিচারপতি সিনহার আদেশে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অবৈধভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত না করার জন্য হাস্যকর কারণ তুলে বলেছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দায়িত্ব পালনকালে অনেক কষ্ট করে মৃত্যুদণ্ডসহ অনেক বিচারের ব্যবস্থা তিনি করেছেন, রায় দিয়েছেন। তদন্ত যদি তার বিরুদ্ধে করা হয়, সে বিচারের বিষয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
‘এটির মাধ্যমে বিচারপতি সিনহা ন্যায় বিচারের প্রতিবন্ধকতা বা বাধা হিসেবে পরিচিত অপরাধ করেছেন, যা দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের নাম শুধু ব্যবহারই করেননি, সুপ্রিম কোর্টের প্যাড ব্যবহার করেছেন, যদিও এটা ছিল তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
এফএইচ/এমএআর/পিআর