রামের কাহিনী নিয়ে প্রচলিত রামায়ণে কিছু ‘ভুল’ চিহ্নিত করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ভারতীয় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)।
Advertisement
প্রচলিত রামায়ণে রাম কি সত্যিই সীতাকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন ও সীতার অগ্নিপরীক্ষা নিয়েছিলেন? না কি সবই রটনা? মূলত এক্ষেত্রে রামকে নারীর প্রতি কঠোর মনোভাবের দেখানো হয়েছে এমন ভুল খুঁজে বের করেছে আরএসএস।
এ নিয়ে আগামী ১২-১৩ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের গোরখপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলনের আয়োজন করছে আরএসএস। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের আশায় আটসাঁট বেঁধে নেমেছে তারা। এখন রামকে নতুন পরিচয়ে তুলে ধরতে বদলে ফেরার চেষ্টার হচ্ছে রামের আখ্যানও।
আরএসএসের ‘অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনা’র সংগঠন সচিব বালমুকুন্দ পাণ্ডের মতে, ‘যুদ্ধকাণ্ডে’র পর রামায়ণ আর বাল্মীকির রচনা নয়। ‘উত্তরাকাণ্ড’ যোগ হয়েছে পরে। সেখানেই বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। তার অভিযোগ, সীতার বনবাস থেকে অগ্নিপরীক্ষা অংশে রামকে ‘নারীবিরোধী’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
Advertisement
বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার রামায়ণ লেখা হয়েছে। এতে উত্তরাকাণ্ড পরে যোগ হয়েছে বলে অনেকেই মানেন।
রামায়ণে বর্ণিত রামের ‘পুরুষতান্ত্রিক’ ভাবমূর্তি বর্তমানে অচল কিনা- এক্ষেত্রে সঙ্ঘের যুক্তি, রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীকে রাম পটমহিষী করেছেন, অহল্যার সামাজিক প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। তিনি কী করে সীতাকে বনবাস বা অগ্নিপরীক্ষায় পাঠাতে পারেন?
সঙ্ঘের এক নেতার অভিযোগ, সম্রাট অশোকের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের লক্ষ্যে রামকে খাটো করা হয়েছে। ১৯৫০ সালের পর থেকে ভারতীয় কমিউনিস্টরাও সেই বিকৃত রামায়ণই প্রচার করেছেন।
এসব নানা যুক্তি তুলে ধরে ১৬টি ভুল চিহ্নিত করে তা সংশোধনের জন্য জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শুক্লকে আহ্বায়ক করে এ সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
এদিকে, একই বিভাগের অধ্যাপক সত্যমূর্তির প্রশ্ন, উত্তরাকাণ্ড পরে লেখা হলেও সেটি বাল্মীকি রামায়ণেরই অঙ্গ। আগেই কেউ উপসংহার স্থির করে ফেললে, তাহলে এ নিয়ে আলোচনার কি আছে।
তেলুগু রামায়ণ ও বাংলা চন্দ্রাবতী রামায়ণ নিয়ে কাজ করেছেন নবনীতা দেবসেন। তিনি মনে করেন, রামায়ণ-বা মহাভারত হাজার হাজার বছর ধরে মুখে-মুখে ফিরেছে। ভুলের অভিযোগে এ থেকে উত্তরাকাণ্ড বাদ গেলে একটি ব্রাহ্মণ্যবাদী ছিবড়ে পড়ে থাকে।
আর নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী মনে করেন, উত্তরাকাণ্ড না থাকলে শম্বুকবধ বা লব-কুশও থাকে না। তাছাড়া কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে বালীকে পিছন থেকে তীর মারা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তাও কি বদলে ফেলা হবে?
এক্ষেত্রে সঙ্ঘের যুক্তি, ভাইয়ের স্ত্রীর প্রতি অনুচিত ব্যবহারের জন্য বালীকে শাস্তি দিয়েছিলেন রাম। কিন্তু উত্তরাকাণ্ডের বিকৃতি সংশোধন করা দরকার। এজন্য প্রয়োজনে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হবে আরএসএস।
এসআর/জেআইএম