মতামত

গৃহকর্মীরা আর কত নির্যাতন সইবে?

শিশু সাবিনার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় গৃহকর্মীদের দুরবস্থার বিষয়টি আবারো সামনে চলে এসেছে। ডিম পোচ করতে গিয়ে কুসুম ছড়িয়ে পড়ার অপরাধে গৃহকত্রী অমানুষিক নির্যাতন করে শিশু সাবিনাকে। নির্যাতনের শিকার শিশুটির বয়স ১১ বছর। বাড়ি টাঙ্গাইল। ছয় মাস আগে রাজধানীর পল্লবীতে এক সেনা কর্মকর্তার বাসায় কাজে দেওয়া হয় তাকে। সেখানেই গৃহকত্রী আয়েশা লতিফের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় সে। বুকে ও হাতে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া শিশুটিকে । শুধু তাই নয় রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে শিশুটিকে আচ্ছামতো পেটানো হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শিশুটি বাসা থেকে পালায়। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে। কিন্তু দুদিন না যেতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

সরকার ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর গৃহকর্মকে ‘শ্রম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’-এর খসড়া অনুমোদন করে। এই নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ায় শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন এমনটি বলা হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে সর্বনিম্ন ১৪ বছরের কাউকে গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া যাবে না। গৃহকর্মীদের শ্রমঘণ্টা এবং বেতন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গৃহকর্মী ও নিয়োগ দাতা চূড়ান্ত করবে এমন বিধান রাখা হয়েছে নীতিমালায়। এছাড়া নীতিমালায় গৃহকর্মীদের বিশ্রাম ও বিনোদনের সময় দেওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে। এই নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ায় শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

দীর্ঘদিন ধরেই গৃহকর্মীদের শ্রমকে স্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি ছিল। নীতিমালা প্রণয়নের ফলে এখন সেটি বাস্তবে রূপ নিল। বর্তমান বাস্তবতায় গৃহকর্মীদের ওপর নির্ভর করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশের ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে। এদের সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। কিন্তু এদের শ্রমের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। ঠিকমত বেতন ভাতা তো দূরের কথা অনেক সময় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় এদের। নারী গৃহকর্মীরা যৌন নিপীড়নেরও শিকার হন। দুঃখজনক হচ্ছে, সমাজের সচেতন অংশ দ্বারাও কখনো কখনো এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। গৃহকর্মীদের নির্যাতন করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে- নীতিমালায় এমন কথাও বলা হয়েছে।

গৃহকর্মীরা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেন। তাদের কর্মপরিধিরও কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এ অবস্থায় তারা আসলে পরিবারেই অংশ হয়ে যান। কিন্তু তাদের কি সে চোখে দেখা হয়? দেখলে তো আর এত সমস্যা হত না। দুঃখজনক হচ্ছে যে, নীতিমালা প্রণয়নের পর গৃহকর্মীদের ব্যাপারে একটি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে-এমনটি আশা করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। হলে সাবিনার এই অবস্থা হতো না। কিন্তু দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে পারে না। গৃহকর্মী নির্যাতনকারীর কঠোর সাজা হওয়া প্রয়োজন। নইলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মানবিকতার উন্মেষ ঘটিয়ে গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় স্বয়ং নিয়োগকর্তাকেই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই গৃহকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে।

Advertisement

এইচআর/জেআইএম