বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারে প্রতিবন্ধকতা ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির মেয়াদে নিযুক্ত কয়েক বিচারপতির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও বর্তমান প্রধান বিচারপতি কোনো ব্যবস্থা নেননি।রোববার জাতীয় সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের রায় নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। এসময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ রায়ের বিরুদ্ধে সংসদে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাসদের মঈন উদ্দিন খান বাদল। এরপর সংসদের উত্তপ্ত বক্তব্য চলে।মতিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার গুরুতর অসদাচরণের কথা আমার বলতে হয়। মাত্র কয়েক মাস আগে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অবৈধভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনোরকম তদন্ত না করতে হাস্যকর কারণের ওপর নির্ভর করে চিঠি দিয়েছেন।তাতে বলা হয়, যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যুদণ্ডসহ অনেক বিচারের বিধান ব্যবস্থা করে রায় দিয়েছেন। তদন্ত যদি করা হয় সেই বিচার্য বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’‘এটি করার মাধ্যমে বিচারপতি সিনহা ন্যায় বিচারের প্রতিবন্ধকতা বা বাধা হিসেবে পরিচিত অপরাধগুলো করেছেন, যা দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর প্রধান বিচারপতি শুধু সুপ্রিম কোর্টের নাম ব্যবহার করেননি, তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্যাড ব্যবহার করেছেন। যদিও এটি ছিল তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’ তিনি বলেন, যে পাকিস্তান জিন্নাহ সাহেবের, সেটি চলে গেছে গোরস্থানে। আমরা সেটাকে গোরস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেই পাকিস্তান হলো প্রধান বিচারপতির আদর্শের বা মতের। তবে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে কেউ জোকারি করে অবশ্যই বাংলাদেশ তার কৈফিয়ত নেবে, নেবেই। সেদিন বেশি দূরে নয়, কেউ প্রশ্নের বা বিচারের ঊর্ধ্বে নন। ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার কন্যা শেখ রেহানা ড. কামাল হোসেনকে মুশতাক সরকারকে কোনো দেশ যাতে সমর্থন না দেয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু ড. কামাল হোসেন তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তার ইহুদি জামাই যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামের ভূমিকাও অনেকে জানেন।’ তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সামরিক ফরমান দিয়ে জিয়াউর রহমান সুপ্রিম কোর্ট জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। অনেক বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে সম্প্রতি আপিল বিভাগ রায় দেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ এই রায় দেন। বর্তমান সরকার ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রতিস্থাপিত করেছিল। ওই সংবিধানের ৯৬ ধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারত সংসদ। এইচএস/জেডএ
Advertisement