ভ্যাট জটিলতা ও বেনাপোল বন্দর কাস্টমসের অসহযোগিতায় প্রায় বন্ধের পথে ট্রাক্টর আমদানি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রায় ৬২৫টি ট্রাক্টর খালাস করতে পারছে না আমদানিকারকরা। কৃষকের চাহিদার মৌসুমে দুই মাস ট্রাক্টর খালাস প্রায় বন্ধ।
Advertisement
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুধু কাস্টম ডিউটি হিসেবে ১ শতাংশ এবং এ্ডভান্স ট্রেড ভ্যাট হিসেবে ৪ শতাংশ আরোপ করা ছিল। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তা শুল্ক, কর ও ভ্যাটের হার ছাড়াও পণ্যটির আংশিক এইচএস কোডও পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত শুল্ক কাঠামোতে সবমিলিয়ে ট্রাক্টরের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কৃষিপণ্যের ওপর এ ধরনের শুল্ক আরোপের কারণে পণ্য খালাস এ সময় থেকেই বন্ধ রাখে আমদানিকারকরা। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়, যে কারণে ট্রাক্টর খালাসের উদ্যোগ নেয় আমদানিকারকরা। কিন্তু বাধ সাধে পরিবর্তিত কাস্টম ট্যারিফ।
জানা গেছে, পরিবর্তিত কাস্টমস ট্যারিফে ট্রাক্টরকে পাঁচটি শ্রেণী বিন্যাস করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ কেডব্লিউ, ৩৭ কেডব্লিউ, ৭৫ কেডব্লিউ, ১৩০ কেডব্লিউ এবং ১৩০ কেডব্লিউ। এ পাঁচটি শ্রেনী বিন্যাসকৃত ট্রাক্টরকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কৃষির জন্য ব্যবহৃত ট্রাক্টর। অন্যটি অকৃষি বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ট্রাক্টর। কৃষির জন্য ব্যবহৃত ট্রাক্টরে চলতি অর্থ বছর থেকে কৃষি মূলধনী যন্ত্র হিসেবে শুল্ক করাদি রেয়াতি প্রদান করা হয়েছে। তবে ট্যাক্স ও অন্যান্য খরচ মিলে ৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হয়। কিন্তু আগের একই ট্রাক্টরকে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এখন অকৃষি পণ্য দাবি করছে। ট্রাক্টরকে বাণিজ্যিক যন্ত্র হিসেবে আনতে গেলে ৩১ শতাংশ শুল্ক ও ভ্যাট দিতে হবে। বাড়তি শুল্কারোপের কারণে দাম বৃদ্ধি হওয়ার শঙ্কা ছাড়াও এর দাম কৃষকের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। এ শঙ্কায় আমদানিকারকরা পণ্য খালাস করছে না।
এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ট্রাক্টর আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, যে যন্ত্রটি তিন মাস আগেও কৃষি যন্ত্র হিসেবে আমদানি করা হয়েছে তা কিভাবে এখন বাণিজ্যিক পণ্য হতে পারে। কৃষি মন্ত্রনালয়সহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগেও কৃষি যন্ত্র হিসেবে আমরা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ট্রাক্টর সরবরাহ করছি । কিন্তু সরকারের আরেকটি বিভাগের সেটিকে বাণিজ্যিক পণ্য বলা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।
Advertisement
জটিলতা নিরসন না হলে পণ্য খালাস বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়তি শুল্কারোপ করা হলে ট্রাক্টরের দাম কৃষকের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। তখন যন্ত্রটি অবিক্রিত থাকতে পারে। এ অবস্থায় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন তিনি।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যমতে, ট্রাক্টর আমদানি ও বিপণন করছে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে ব্র্যান্ড, কর্ণফূলী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার,পারফরমেন্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড, ইফাদ অটোসের এসকর্ট এবং এসিআই মোটরসের সোনালিকা ট্রাক্টর। এসব প্রতিষ্ঠানের বেনাপোল বন্দরে প্রায় ৬২৫ টি ট্রাক্টর খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমসের জটিলতায় আমদানি করা এসব পণ্য খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্কারোপ ও ভ্যাট আরোপের কারণে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দাম বৃদ্ধি পাবে। এর সঙ্গে ব্যাংকের সুদ ও অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়ে দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। ফলে কৃষক বাড়তি দামের কারণে ট্রাক্টর কেনায় আগ্রহ হারাবে।
এ বিষয়ে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট বেনাপোলের কমিশনার মো. শওকাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ট্রাক্টর আমদানি নীতিমালায় কিছুটা সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে এখানে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। যদিও সেটি কারও কাম্য নয়। তবে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে যুগ্ন কমিশনার মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে আলাপের পরামর্শ দেন তিনি। পরবর্তীতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ও অফিসের টিএনটি ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Advertisement
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের যৌথ জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৫ হাজারের বেশি ট্রাক্টর চালু রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছ থেকে নগদ প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার কারণে ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ট্রাক্টরের বাজার ৩৫-৪০ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হয়েছে। ২০১২ সালে ৪ হাজার ৬০০ ট্রাক্টর আমদানি করা হয় যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৪১৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে আমদানি ব্যয় ৫৬৩ কোটি টাকা হলেও ২০১৬ সালে তা উন্নীত হয় ৫৭৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ টি ট্রাক আমদানি হয়েছে। চলতি বছরে ভ্যাট ও বন্দরের জটিলতায় আমদানিতে ভাটা পড়বে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এমএ/ওআর/জেআইএম