মালয়েশিয়া সরকার কয়েকবার ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমে দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসরত শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিলেও লাখ লাখ শ্রমিক বৈধ হতে পারেননি। এসব অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এখন সাঁড়াশি অভিযান চালচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। আত্মগোপনে থেকেও রেহাই পাচ্ছেন না তারা। বাসা-বাড়ি, শপিংমল, কারখানা, কনস্ট্রাকশন সাইডসহ রাস্তা-ঘাটেও চলছে এ অভিযান। ফলে এসব অভিবাসীদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে।
Advertisement
জানা গেছে, দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ কোতাবারু, পেনাং, সেলাঙ্গুর, কোতা-কিনাবালো, জহুরবারু, ক্যামেরুন হাইল্যান্ড, ইপো, পেটালিং জায়া, শাহালম, মালাক্কা, কোয়ান্তান সিটিতে কর্মরত শ্রকিকরা পুলিশের ভয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাহাড় ও জঙ্গলে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সাঁড়াশি অভিযানে গত এক সপ্তাহে মোট আটকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজারেরও অধিক। এর মধ্যে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছেন।
মালয়েশিয়া সরকারের নতুন অভিবাসী আইন ৫৫ বিএ ১৯৫৯/৬৩ ধারা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের আটক দেশটির পুলিশ। মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা নিশ্চিতে ই-কার্ড নিবন্ধনের মাধ্যমে গত ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছিল দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। সরকার কয়েকটি ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমে বৈধ করণের প্রক্রিয়ার সুযোগ দিলেও কয়েক লাখ শ্রমিক বৈধ হতে পারেনি। এসব শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যাই বেশি। এ সংখ্যা তিন লাখের বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে দেশটিতে অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানে আটক অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধতা দিতে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। গত ৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মালয়েশিয়া শাখা এবং এর সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
Advertisement
গত শুক্রবার (৭ জুলাই) কুয়ালালামপুরের একটি কনস্ট্রাকশন সাইডে দেখা মিলে পাঁচ বাংলাদেশি শ্রমিকের। যেখানে ৪ জনই অবৈধ। তাদের মধ্যে নাজমুল জাগো নিউজকে জানান, ২০১২ সালে ট্যুরিস্ট ভিসায় বৈধপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। কুয়ালালামপুরের বুকিত জলিল এলাকায় রেস্টুরেন্টে কাজ করেছেন এক বছর। এ সময় কম হলেও ১০ বার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ঝামেলা এড়াতে রাজধানী ছেড়ে মালাক্কা প্রদেশে চলে যাই, তবে আবারও ইমিগ্রেশনের তাড়া খেয়ে কুয়ালালামপুরে চলে আসি। কম বেতনের কাজ করলেও শান্তি ছিল। কিন্তু হঠাৎ উওপ্ত হয়ে ওঠে মালয়েশিয়া। আমরা ৫ জন টানা চারদিন পাহাড়ের গুহায় পালিয়েছিলাম।
বুকিত জলিলে একটি কনস্ট্রাকশনে কাজ করেন বাংলাদেশি মামুন। তিনি বলেন, পালিয়ে কাজ করা বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। একদিকে বনে-জঙ্গলে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রপ, খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব। অন্যদিকে পুলিশের অভিযানে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের মত অবৈধ বিদেশি কর্মীদের ধরপাকড় না করে কাজের সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির মাস্টার বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমবিএএম)। তবে তাদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি হিসাবে মালয়েশিয়ায় ৬ লাখেরও বেশি বৈধ শ্রমিক বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজ করেছেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, দেশটিতে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ার, ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ নেপালের, ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশের, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মিয়ানমারের, ৫ দশমিক ১ শতাংশ ভারতের, ৩ দশমিক ১ শতাংশ ফিলিপাইনের, ২ দশমিক ৫ শতাংশ পাকিস্তানের, শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থাইল্যান্ডের এবং অন্যান্য দেশের ৪ শতাংশ শ্রমিক দেশটিতে কাজ করছে।
এদিকে ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হলেও মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন অবৈধ প্রবাসীদের মাই-ইজির সুযোগ নিয়ে বৈধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হাই কমিশনার। দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর জানান, মালয়েশিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে অন্য দেশের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ বিশেষবাবে নজরে রাখছে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা। তবে যারা আটক হয়েছেন তারা দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া এখন আর কোনো পথ নেই।
আরএস/এমএস