একের পর এক পুলিশের ‘ব্লক রেইড’ কোণঠাসা করে ফেলেছে উত্তরের জঙ্গিদের। এমনই একটি সাঁড়াশি অভিযানে পড়েছেন নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ ওরফে শাহাদাত।
Advertisement
গতকাল শুক্রবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পুষ্কনি এলাকার একটি আমবাগানের টংঘর থেকে সোহেল মাহফুজসহ চার জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সোহেল মাহফুজ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সাদিপুর কাবলিপাড়া গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে। নব্য জেএমবির অস্ত্র কেনা, গ্রেনেড তৈরি এবং সরবরাহের দায়িত্ব ছিল তার। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির আইটি শাখা প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
গ্রেফতার তার অন্য তিন সহযোগী হলেন শিবগঞ্জের আফজাল হোসেনের ছেলে হাফিজুর রহমান হাফিজ, উপজেলার বিশ্বনাথপুর কাটিয়াপাড়ার ইসলামের ছেলে জুয়েল রানা এবং পার্বতীপুর চকমোহনপুরের ইয়াছিন আলীর ছেলে জামাল হোসেন।
Advertisement
এদের মধ্যে হাফিজ আইটি বিশেষজ্ঞ, জুয়েল রানা অস্ত্র সরবরাহ এবং জামাল হোসেন নব্য জেএমবির রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। গোপন বৈঠক শেষে এলাকা ছাড়ার আগেই এ চার জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর সোহেল মাহফুজকে ঢাকায় নিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে একাধিক মামলা থাকায় বাকিদের সেখানকার আদালতে নেয়া হয়।
শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেন, রাজধানীর হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম আহমেদ চৌধুরীর আহ্বানে নব্য জেএমবিতে যুক্ত হন সোহেল মাহফুজ। এ হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন সোহেল মাহফুজ। তিনি ওই হামলার গ্রেনেড সরবরাহকারী ছিলেন। রাজশাহীতে বসে ওই হামলার পরিকল্পনা হয়।
ডিআইজি বলেন, নব্য জেএমবির অস্ত্র কেনা, গ্রেনেড তৈরি এবং সরবরাহের দায়িত্ব নেন সোহেল মাহফুজ। তিনি সংগঠনটির আইটি শাখা প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বোমা তৈরি করতে গিয়ে বাঁ হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। তা সত্ত্বেও এক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় বেশ দক্ষ এই জঙ্গি নেতা।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাহফুজ রাজশাহী অঞ্চলে অবস্থান করে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। মূলত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া ও গাইবান্ধায় তার চলাফেরা ছিলো। এর মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর ও বাগমারায় বেশি অবস্থান করতেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাকে টার্গেট রেখেছিল পুলিশ।
এম খুরশীদ হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গি মাহফুজের প্রায় ৩০০ অনুসারী রয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন সময় এ অঞ্চলে ‘ব্লক রেইড’ দিয়েছে পুলিশ। এতে গ্রেফতার হয়েছেন জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা। ফলে এ অঞ্চলে জঙ্গি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুরোপরি জঙ্গিবাদ নির্মূলে সময় লাগবে।
তিনি আরও জানান, সোহেল মাহফুজ ২০০৫ সালের দিকে জেএমবির তৎকালীর শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের হাত ধরে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। শীর্ষ জেএমবি নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর জেএমবির শুরা কমিটির সদস্যপদ পান মাহফুজ।
২০১০ সালের দিকে তৎকালীন জেএমবি প্রধান সাইদুর রহমান গ্রেফতার হলে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। আত্মগোপনে থেকেই উত্তরাঞ্চলে জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মাহফুজ।
ভারতের বর্ধমানের খগড়াগড় বিস্ফোরণকালে সোহেল মাহফুজ জড়িত বলে জানিয়েছে দেশটির গোয়েন্দারা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিআইজি জানান, এ বিষয়ে তারা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সোহেল মাহফুজসহ জেএমবির অন্তত দুই ডজন নেতা ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার টার্গেটে। সোহেলকে ভারতেও খোঁজা হচ্ছিল বলেও জানান তিনি।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/আরআইপি