যৌথ প্রযোজনার নামে নির্মিত ‘যৌথ প্রতারণা’ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার। চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন নিয়ে গঠিত এ প্লাটফর্মের অন্যতম কণ্ঠস্বর বর্ষীয়ান অভিনেতা ফারুক। এ তারকাকে নিয়ে কটূক্তি করার কারণে সম্প্রতি চলচ্চিত্র সংগঠনগুলো বয়কটও করেছে শাকিব খানকে। এ তালিকায় আছেন আজিজও।
Advertisement
তাই যৌথ প্রতারণার পক্ষের লোকজন সমঝোতায় যেতে ফারুককেই টার্গেট করেছেন বলে গেল কয়েকদিন ধরে চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ গুঞ্জনের শুরু গেল ৪ জুলাই গুলশানের এক রেস্তোরাঁয় শাকিবের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সম্মেলটি শাকিব খানের পক্ষ থেকে ডাকা হলেও উপস্থিত ছিলেন জাজের কর্ণধার আব্দুল আজিজ, সিইও আলিমুল্লাহ খোকন, পরিচালক কাজী হায়াৎ, নাদের চৌধুরী ও সাংবাদিক নেতা শাবান মাহমুদ। সাধারণত এই কয়েকজনই প্রকাশ্যে চলচ্চিত্র পরিবারের আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
তাদের সঙ্গে সেখানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতা নানা শাহকে দেখার পর অনেকেই নড়েচড়ে বসেন। ধারণা করা হয় নানা শাহকে ঘিরে নতুন মোড় নিচ্ছে চলচ্চিত্রের এ সংকট অবস্থার। এবং সেটাই হয়েছে।
খবর রটে গেছে, ওই সংবাদ সম্মেলন শেষে সবাইকে ফারুকের বাসায় নিয়ে যান নানা শাহ। সেখানে আন্দোলন ভেঙে দিয়ে আব্দুল আজিজদের হয়ে সমঝোতায় আসতে ফারুককে অনুরোধ জানান এই অভিনেতা। কিন্তু ফারুক তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
Advertisement
এ খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। শাকিবের সম্মেলনে নানা শাহের উপস্থিতির কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ও ফারুকের বাসায় গিয়ে সমঝোতার মধ্যস্ততার সংবাদ পেয়ে তার কাছে বিষযটি সম্পর্কে জানতে চান শিল্পী সমিতির নেতারা। এসময় তিনি এইসব কথা অস্বীকার করেন। এই বিষয়টি গেল ৫ জুলাই জাগো নিউজের কাছে নিশ্চিত করেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
কিন্তু গেল ৬ জুলাই সন্ধ্যায় শিল্পী সমিতির একটি মিটিংয়ে নানা শাহ সবকিছু স্বীকার করে নেন বলে জানা গেছে। শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমরা অবাক হয়েছি নানা শাহের ভূমিকায়। তিনি কিছুতেই কাউকে কিছু না বলে এর মধ্যস্থতায় যেতে পারেন না। তিনি জানিয়েছেন পুরো বিষয়টির সমঝোতার জন্য ফারুক সাহেবের কাছে আব্দুল আজিজ সাহেবদের নিয়ে গেছেন তিন। ফারুক সাহেবকে সমঝোতায় এসে সবকিছু মিটমাট করে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু ফারুক সাহেব তাদের কিছু শর্ত দিয়েছেন। সেইসব শর্তের জন্য আলাপ খুব বেশিদূর এগুয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নানা শাহ আজ (৬ জুলাই) হঠাৎ করেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলেন। তার দাবি জাজের সঙ্গে সমঝোতা না করলে তিনি পদত্যাগ করবেন। সেই সমঝোতা ইন্ডাস্ট্রির জন্য কতোটা মন্দ হবে তা তিনি ভাবছেন না। আমরা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি।’
তবে এই বিষয়ে নানা শাহ’র কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আব্দুল আজিজও রয়েছেন দেশের বাইরে। তাই তার মন্তব্যও পাওয়া যায়নি। এদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার পক্ষ থেকে ফারুক সাহেবের বাসায় গিয়ে আব্দুল আজিজের ক্ষমা চাওয়া বা সমঝোতার চেষ্টার খবরকে মিথ্যে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সিইও আলিমুল্লাহ খোকন ৭ জুলাই রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘নত মস্তকে ফারুকের বাসায় জাজ কর্ণধার’ শিরোনামে প্রকাশিত নিউজ ভিত্তিহিন ও মানহানিকর। মূলত জাজের কর্ণধার আব্দুল আজিজ কিংবদন্তী অভিনেতা জনাব ফারুক সাহেবের শারীরিক অসুস্থতার কারনে উনাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাই জাজের পক্ষ থেকে আমি এই নিউজটির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
Advertisement
এদিকে ফারুক সাহেবের বাসায় দলবল নিয়ে আব্দুল আজিজের যাওয়ার খবরে নানা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র পাড়ায়। অনেকেও শংকাও প্রকাশ করেছেন ভুল বুঝিয়ে ফারুক সাহেবকে যদি চুপ করিয়ে দেয়া হয় তবে বিরাট বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশীয় সিনেমার নির্মাণ। কেউ কেউ এই গুঞ্জনে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন।
সবাই তাই অপেক্ষা করছেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন ফারুক। তিনি মুখ খুলবেন সবার সামনে। স্পষ্ট হবে সেদিন নানাশাহের মধ্যস্থতায় আব্দুল আজিজ ও অন্যরা কী বিষয়ে কথা বলেছেন অভিনেতা ফারুকের সঙ্গে। আর কী সিদ্ধান্তই বা নেয়া হয়েছিলো। তার আগ অব্দি এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা থামানো মুশকিল।এলএ