উদ্ধারের পাঁচদিন পরও কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের মনে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোনোভাবেই তার আতঙ্ক কাটছে না। এ ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরাও উদ্বিগ্ন। তাদের মন থেকেও ভয় ও উৎকণ্ঠা কাটছে না।
Advertisement
শনিবার সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ অবস্থার কথা জানান ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, ‘ফরহাদ মজহার আগের থেকে কিছুটা সুস্থ। তবে তার মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় আমাদের পরিবারও উদ্বিগ্ন। আমাদের মন থেকে এখনও উৎকণ্ঠা কাটেনি।’
এদিকে চারদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফরহাদ মজহার আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ রয়েছেন।
Advertisement
গত ৩ জুলাই ভোরে ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন রাতে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে হানিফ পরিবহনের ঢাকামুখী একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার সিএমএম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ফরহাদ মজহার। এরপর নিজ জিম্মায় জামিন পান তিনি।
জামিন নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থতা বোধ করলে তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ফরহাদ মজহার বলেন, সোমবার ভোরে তিনি ওষুধ কেনার জন্য বাসা থেকে বের হন। পথে কে বা কারা তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। তিনি তাদের কাউকে চিনতে পারেননি। অপহরণের পর নিজের মুক্তির জন্য অপহরণকারীদের মুক্তিপণের প্রস্তাব দেন তিনি। এরপর টাকার জন্য বাসায় ফোন করেন। তবে একপর্যায়ে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ না নিয়েই তাকে ছেড়ে দেয়। ‘সরকারকে বিব্রত করতে আমাকে অপহরণ করা হয়’-বলেও জবানবন্দিতে বলেন তিনি।
এদিকে ৬ জুলাই খুলনার শিববাড়ি মীরের ডাঙ্গা হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গফুর পরিচয়ে ফরহাদ মজহার রাত সোয়া ৯টার বাসে (ঢাকা-মেট্রো-১৪-৯৮০১ ও কোচ নং ৫০৫) ঢাকার টিকিট কাটেন। তিনি আই-থ্রি আসন নির্বাচন করেন। বাসের টিকিটের মূল্য ছিল এক হাজার তিনশ টাকা। এসময় তার কাছে একটি ব্যাগ ছিল। টিকিট কেটে তিনি কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে সেখান থেকে চলে যান।
Advertisement
৩ জুলাই ভোরে শ্যামলীর রিং রোডের ১নং হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পরই নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। পরে স্ত্রীকে নিজের মোবাইল ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়বার ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরে হানিফ পরিবহনের বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
এদিকে, শনিবার রমনার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মাদকবিরোধী এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ফরহাদ মজহারের অপহরণের কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত পুলিশ পায়নি। মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে বলেও তিনি জানান।
জেএ/এসআর/জেআইএম