সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন গ্রুপ চ্যাটের মৌসুম বলাই যায়; স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে তেমন একটা আমাদেরও আছে। হঠাৎ সেখানে আওয়াজ উঠল- চল ঘুরতে যাই; শহরের যান্ত্রিকতা থেকে দু’দণ্ড মুক্তির প্রত্যাশায় চল না ঘুরে আসি কোথাও! শুরু হলো গবেষণা: শর্তটা এমন; ভোরে রওনা দিয়ে দিনে দিনে ফেরা; সারাদিন মাটি আর সবুজের কাছাকাছি কোথাও। বেশ কয়েকটা জায়গার চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আমাদের সবারই মনে ধরলো ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’।
Advertisement
কেন? বলছি, একে তো পাখ-পাখালি দুরন্তপনা, বাড়ন্ত স্বাধীনতায় নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য গ্রামীণ ব্যবস্থাপনা। তার ওপর অফুরান সবুজের মাঠ। মাঁচা করা কুটির। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। পাশের খালে কচুরিপানার ইতস্তত ভ্রমণ আর ছোট্ট ডিঙি নৌকার মৃদু দোলুনি। এর ওপর বাড়তি পাওনা গ্রামবাংলার বারোয়াড়ি ভর্তা, পুকুরের টাটকা মাছ থেকে শুরু করে জিভে জ্বল আসা সব মেন্যু। আছে পাটিতে পা লেপ্টে বসে গ্রামীণ লোকশিল্পীদের কণ্ঠে মন উজাড় করা আবহমান বাংলার জারি-সারি-ভাটিয়ালি গান। আর কী চাই বলুন! সুতরাং এককথায় সবাই রাজি, দে ছুট মাটির টানে জল ও জঙ্গলের কাব্যে।
শোনা গেল, ২০০৫ সালে বিমান বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া এক বৈমানিক শখের বসে গড়ে তোলেন শহর থেকে একটু দূরে এই গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি। ইচ্ছে ছিল প্রকৃতির কাব্যে নিজেই ঘুরে বেড়াবেন একা একা, প্রকৃতিচারী হয়ে। আর শুনবেন পাখির মিষ্টি কলতান। পরে অবশ্য তিনিই একদিন ভাবলেন, এর স্বাদ কেন পাবে না আর সবাই? যেই ভাবা সেই কাজ; জীবন হলো আরো সুন্দর সবার আনন্দে।
গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি পুরোটা এলাকাজুড়ে ১০-১২টা শেড; এক একটি শেডের আলাদা আলাদা নাম আর সাইজ: বকুল তলা, বট তলা ইত্যাদি। মাঝে মাঝে তার মেঠো পথ। একপাশে ঢেঁকিতে চাল গুড়ো হচ্ছে; চালের আটা দিয়ে রুটি আর চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে হচ্ছে গরম ধোঁয়া তুলে। আরেক পাশে বিশাল হেসেল- পুরোদমে চলছে খাবারের প্রস্তুতি। একদিকে চা-ঘর, দু’ পা ছড়িয়ে বাশের বেঞ্চিতে বসে চা, আহ! চোখে সবুজ আর হাতে গরম চায়ের মগ, অমৃত এই সুখের অফুরান আস্বাদন একদম ফ্রি।
Advertisement
আবার কারো মন চাইলো একটু নৌকা ভ্রমণে; নো টেনশন, বাঁধা আছে বেশ কয়েকটা ছোট্ট ডিঙি। বিলের শাপলার পথ মাড়িয়ে আসতেও কোনো বাঁধা নেই।
মাত্র ৭৫ বিঘা জমির সঙ্গে বিস্তীর্ণ বিলে সাজানো এই কাব্যের প্রতিটি পরতে পরতে স্বস্তির স্বাদ। আর যদি একটু ঝুম বৃষ্টি থাকে তাহলে তো কথাই নেই!
কিভাবে যাবেনপুবাইল কলেজ গেট থেকে জল-জঙ্গলের কাব্য মাত্র ৩ কিলোমিটার। জয়দেবপুর রাজবাড়ির পাশ দিয়েও যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে গেলে টঙ্গী স্টেশন রোড বা ৩০০ ফিট দিয়ে যাওয়া যায়। জল-জঙ্গলের কাব্য পুবাইল, ডেমুরপাড়াতে অবস্থিত। এছাড়া মহাখালী থেকে নরসিংদী বা কালীগঞ্জগামী যেকোন বাসে উঠুন। ১ ঘণ্টা পর পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় নেমে পড়ুন। ভাড়া নেবে ৪০ টাকা। এরপর একটা ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে পাইলট বাড়ি। তবে অবশ্যই আগে বুকিং থাকতে হবে।
অথবা ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, আজিমপুর, মহাখালী থেকে গাজীপুর পরিবহন, ঢাকা পরিবহন, ভিআইপি পরিবহন ও বলাকা পরিবহনে শিববাড়ী চলে যাবেন। ভাড়া ৭০ টাকা। শিববাড়ী থেকে অটোরিকশায় ভাদুন (ইছালি) জল-জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।
Advertisement
খরচাপাতিএখানে জনপ্রতি নেওয়া হয় ২,০০০ টাকা। নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবারসহ। খরচটা একটু বেশি মনে হতে পারে। তবে খাবারের বহরা দেখলে তা আর মনে হবে না। সারাদিনের জন্য ১,৫০০ টাকা জনপ্রতি (সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকেলে হালকা নাস্তা)। শিশু (৫-১০ বছর), কাজের লোক ও ড্রাইভার জনপ্রতি ৬০০ টাকা।
যোগাযোগ : কামরুল- ০১৯১৯৭৮২২৪৫
এসইউ/এমএস