বিশেষ প্রতিবেদন

রিপোর্টারদের ‘হাঁড়ি’ ঠেলে ১৪ বছর কেটে গেছে শাহ আলমের

বিশাল দুটি ডেকচিতে রান্নার আয়োজন চলছে। শুক্রবার ছুটির দিনের মেন্যুতে পোলাও, মাংস ও ডিম। বড় হাতল দিয়ে ডেকচিতে নাড়াচাড়া করতে করতে সহকর্মীদের দ্রুত রান্না শেষ করার তাগাদা দিচ্ছেন এক যুবক। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন ধরাধরি করে একটি বড় ডেকচি নিচে নামিয়ে রাখলো। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে উনুন থেকে জ্বলন্ত কয়লা এনে ডেকচির ওপরে ঢেলে দিচ্ছিলেন তিনি।

Advertisement

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) বাগান সংলগ্ন রান্নাঘরে এ দৃশ্যে চোখে পড়ে। ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া কর্মরত রিপোর্টারদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ডিআরইউ।

সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি রিপোর্টারদের পেশাগত মানোন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিজস্বভাবে পরিচালিত ক্যান্টিনে প্রতিদিন তিনশতাধিক রিপোর্টারের জন্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খাবারের সুযোগ করে দিয়েছে। রিপোর্টাররা সকাল থেকে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্টে ব্যস্ত সময় কাটালেও দুপুরে ডিআরইউতে ছুটে আসেন। অসংখ্য রিপোর্টারের উপস্থিতিতে সরব থাকে ক্যান্টিন।

ডিআরইউ’র ক্যান্টিনের মজাদার খাবার খেয়ে রিপোর্টাররা তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও অনেকেই হয়তো রান্নার কারিগরদের চিনেন না। ছয় থেকে সাত সদস্যের রান্না কারিগরদের প্রধান শাহ আলম বাবুর্চি।

Advertisement

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শাহ আলম জানান, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মাসুমের মাধ্যমে ১৪ বছর আগে ক্যান্টিনের কাজে যোগ দেয়। সেই থেকে প্রতিদিন হাড়ি ঠেলে চলেছে। প্রতিদিন তিনশতাধিক রিপোর্টারের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করছি।

তিনি জানান, ডিআরইউ অ্যাপ্যায়ন সম্পাদকের পরামর্শে আগামীকালের দুপুরের খাবারের প্রয়োজনীয় সব বাজার আগেরদিনই করে রাখেন। রিপোর্টাররা দুপুর ১টার মধ্যে ক্যান্টিনের টেবিলে খাবার পেলেও তাদের রান্নাবান্না শুরু করতে হয় সকাল ৭টা থেকে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রতিদিনের রান্নাবান্নার আয়োজন কোনো বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের চেয়ে একেবারে কম নয়।

তিনি আরও জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রান্না নিশ্চিত করতে ডিআরইউ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কর্মকর্তারা তীক্ষ্ণ নজর রাখেন।দেশের নামিদামি রিপোর্টারদের বিগত ১৪ বছর ধরে রান্না-বান্না করে খাওয়াতে পেরে শাহ আলম আনন্দিত।

ক্যান্টিনের ম্যানেজার সোলায়মান জানান, প্রতিদিনই গড়ে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রিপোর্টারের জন্য রান্নার আয়োজন থাকে। খাবার মেন্যুতে মুরগি, মাছ, সবজি, ভর্তা থাকে। মুরগি ২৫ টাকা, মাছ ১৫ টাকা, সবজি ৫ টাকা ও ভর্তা ৫ টাকা। ভাত আর ডাল ফ্রি। তবে এ মূল্যে শুধুমাত্র সদস্য রিপোর্টারদের জন্য। কেউ মেহমান নিয়ে আসলে মূল্য দ্বিগুণ।

Advertisement

ডিআরইউ’র সাবেক ও বর্তমান একাধিক নেতা জাগো নিউজকে জানান, সদস্যদের অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খাবার গ্রহণের সুযোগ করে দিতে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা সাবসিডি দেয়া হয়। প্রতিটি কমিটি ধারাবাহিকভাবে সাবসিডি দিয়ে আসায় এখন এটি ট্রাডিশন হয়ে গেছে।

এমইউ/জেএইচ/এএইচ/পিআর