মতামত

ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়া : সিটি কর্পোরেশন কি করছে?

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে আতঙ্কের নাম এখন চিকনগুনিয়া। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারি হিসাবেই দুই হাজারেরও বেশি মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর ৫০টি এলাকায় জরিপ চালিয়েছে সম্প্রতি। জরিপে দেখা গেছে প্রায় সব এলাকায়ই চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ রয়েছে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড়ালে সেই মশাও রোগ ছড়ানোর বাহকে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

Advertisement

চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত একটি ভাইরাসের নাম। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী মশাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহন করে। গ্রামাঞ্চলে অনেকে একে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে প্রথমদিন থেকেই রোগীর অনেক বেশি তাপমাত্রায় জ্বর ওঠে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। প্রায়ই তা একশ’ চার বা পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় উঠে যায়। একইসঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। জ্বর ভালো হলেও অনেকদিন ধরে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিকারের আগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। সেজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।

যেহেতু মশার কারণে রোগটি ছড়ায়, তাই মশার কামড় থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঘরের বারান্দা, আঙিনা বা ছাদ পরিষ্কার রাখতে হবে। এসি বা ফ্রিজের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে। মশাটি দিনের বেলায় কামড়ায়, তাই দিনে কেউ ঘুমালে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশা মারার জন্য স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট পরাতে হবে। হয়। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। সবার খেয়াল রাখতে হবে যেন মশা ডিম পাড়ার সুযোগ না পায়। আর জ্বরাক্রান্ত চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তারে দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে। রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি, কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে।

চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তারে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে।চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনকে আরো সক্রিয় হতে হবে যাতে এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়। এ লক্ষ্যে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষজনকে সচেতন করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। আশার কথা হচ্ছে, দেরিতে হলেও সারা দেশে চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু হয়েছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

এইচআর/পিআর