কোথাও চলছে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল প্রতিস্থাপনের কাজ। আবার কোথাও চলছে পয়ঃনিষ্কাশনের সংযোগ প্রশস্তের কাজ, কোথাও ওয়াসার পানি সরবরাহের সংযোগ বসানোর কাজ।
Advertisement
সড়কজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। একটি বাস চলাচলের মতো প্রশস্ত জায়গা দিয়ে লাইন ধরে ধীরগতিতে চলছে গাড়িগুলো। সঙ্গে বৃষ্টি-কাদা-জলাবদ্ধতা। মিরপুরের প্রবেশদ্বার আগারগাঁওয়ের বর্তমান চিত্র এমনই।
ব্যস্ততম এ সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু অর্ধেক রাস্তা কাটার ফলে তা সরু হওয়ায় দীর্ঘ যানজটের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মিরপুরগামী লাখ লাখ মানুষকে। তালতলা থেকে শুরু করে মিরপুর-ে১০ গোলচত্বর পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ গণপরিবহনে বসে থাকতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে কাছের গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
মাসের পর মাস ধরে চলা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগ তীব্র আকার ধারণ করছে। ‘উন্নয়নের ভোগান্তি’ দেখে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেল প্রকল্প, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, তিতাস, বিটিসিএলসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অব্যাহত এ খোঁড়াখুঁড়িতে অতিষ্ঠ মানুষ। শিগগিরই তারা এ থেকে মু্ক্তি চান।
Advertisement
কাজীপাড়া থেকে প্রতিদিন মতিঝিলে অফিস করেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আগারগাঁও সিগনালের আগ থেকে তালতলা পর্যন্ত সড়কের মাঝখান বরাবর গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। গর্ত ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনীও নেই। বৃষ্টি-কাদা-জলাবদ্ধতা নিয়ে হেঁটে পার হওয়ার পরিবেশও নেই।
অপর ভুক্তভোগী শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা লিয়াকত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আগারগাঁও সিগনালের অনেক আগে থেকে যানজটে বসে থাকতে হয়। এসব খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষে মেট্রোরেলের মূল কাজ শুরু হবে। তখন হয়তো ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই উন্নয়ন চাই কিন্তু সেই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি চাই না। এমন ভোগান্তিতে মিরপুরবাসীর কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে আগারগাঁওয়ের এ খোঁড়াখুঁড়ি।’
ওই সড়কে ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজে দায়িত্বে থাকা ওয়াসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, মেট্রোরেলের কাজের অংশ হিসেবে ইউটিলিটির সার্ভিস প্রতিস্থাপনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থানান্তরের কাজ করছে শ্রমিকরা। এসব কাজের জন্য সাধারণ মানুষের যাতায়াতে আসলেই ভোগান্তি হচ্ছে। উন্নয়নের স্বার্থে আরও কিছু সময় সাধারণ মানুষকে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হবে। আমরাও চেষ্টা করছি জনগণের ভোগান্তি দ্রুত শেষ করতে।
Advertisement
প্রতিদিনের এমন ভোগান্তির বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, উন্নয়ন অবশ্যই জরুরি কিন্তু তা দীর্ঘসময় ধরে মানুষের ভোগান্তির কাম্য নয়। রাজধানীতে যানবাহন-জনগণের তুলনায় রাস্তাঘাট খুবই কম। এই কম রাস্তাঘাটের ওপর যদি এমন কাজ করা হয় তাহলে জনগণের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তাই জনগণের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে দ্রুত সময়ে উন্নয়ন কাজ সফলভাবে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে এ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের সহজে যাতায়াতের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
দুর্ভোগের বিষয়ে ওই সড়ক ব্যবহারকারী বিহঙ্গ বাসের চালক আলাউদ্দীন বলেন, বিকাল থেকে রাত অবধি সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় খু্বই ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হয়। রাস্তায় যদি কোনো গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে তাহলে আর রক্ষা নেই। এক স্থানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়।
এএস/এমআরএম/এমএআর/জেআইএম