রেলের ১২ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমানো হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে কিন্তু বাস্তবায়নে গতি নেই এমন প্রকল্প থেকে এ বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়েছে। অন্যদিকে কিছু প্রকল্পে কাজের গতি থাকলেও রয়েছে অর্থ সংকট। এ অবস্থায় ধীরগতি সম্পন্ন প্রকল্পের টাকা কেটে নিয়ে একই মন্ত্রণালয়ের অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষ প্রাপ্তে এসে সংশোধিত এডিপি থেকে অর্থ কাটাকাটি করেছে রেল মন্ত্রণালয়। চলমান ১২টি প্রকল্পের টাকা কেটে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে সাতটি প্রকল্পে। এর পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছে রেল বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে, বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করতে না পারা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ থাকা এবং অন্য প্রকল্পে অর্থের ঘাটতি। তবে বরাদ্দ কাটায় প্রকল্পগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।
রেল বিভাগ সূত্র জানায়, ধীরগতি সম্পন্ন ১২ প্রকল্প থেকে ৩৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। পরবর্তিতে তা অন্য গুরুত্বপূর্ণ সাত প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেল মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এখানে যেসব প্রকল্প থেকে টাকা কাটা হচ্ছে এ প্রকল্পগুলো দীর্ঘ মেয়াদে চলবে। তাই চলতি অর্থবছর সামান্য কিছু টাকা অন্য প্রকল্পে বরাদ্দ দিলেও প্রকল্পের কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া আগামী অর্থবছরের জন্য এ প্রকল্পগুলোতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া রয়েছে। সুতরাং এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
Advertisement
সূত্র জানায়, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ফাস্টট্রাকভুক্ত দোহাজারি হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প থেকে কাটা হচ্ছে ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, ভূমি অধিগ্রহণ খাতে যে বরাদ্দ ছিল সেখান থেকে এ অর্থ বেঁচে গেছে। অর্থাৎ জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী ল্যান্ড রিক্যুজিশনের পুরো টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এই ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা খরচ করা যায়নি। তাই অন্য প্রকল্পে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ক্ষতি হবে না।
এছাড়া রেলওয়ের পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙা-রেলপথ পুর্নবাসন ও নির্মাণ প্রকল্প থেকে কাটা হচ্ছে ১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
হাইটেক পার্কের জন্য মির্জাপুর ও মৌচাক স্টেশনের মধ্যবর্তী কালিয়াকৈর- একটি বি ক্লাশ স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পে ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেল লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে ১৬ লাখ টাকা, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি মিটার গেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্প থেকে পাঁচ লাখ টাকা, লাকসাম চিনকি আস্তানার মধ্যে ডাবল লাইন ট্র্যাক প্রকল্প থেকে তিন কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ কাটছাঁট হয়েছে।
Advertisement
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রি-মডেলিং এবং বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের অপারেশনাল সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্পে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর সেকশনের ওভারপাস নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম প্রকল্পে দুই লাখ টাকা, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৩০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পে দুই কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর সেকশনের চারটি স্টেশনের নবনির্মিত তৃতীয় লাইনগুলোতে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রকল্পে এক লাখ টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে।
এ ১২ প্রকল্প থেকে টাকা কেটে উপযোজনের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়ের সাত প্রকল্পে। এসব প্রকল্পের অনুকূলে সংশোধিত এডিপিতে যে বরাদ্দ ছিল তা খরচ হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
বরাদ্দ দেয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৫০টি বিজি ও ৫০টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুর্নবাসন প্রকল্প, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী জয়দেবপুর সেকশনের ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ, কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুর্নবাসন প্রকল্প।
এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং পুর্নবাসন ও মান উন্নয়ন, কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশনের পুর্নবাসন এবং কাশিয়ানি-গোপলগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া নতুন রেললাইন নির্মাণ, ঈশ্বরদি থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেল লাইন নির্মাণ এবং ষোলশহর-দোহাজারী এবং ফতেহাবাদ-নাজিরহাট সেকশন পুর্নবাসন প্রকল্পে অতিরিক্ত টাকা হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
এমএ/এএইচ/আরআইপি