সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটলেও তার কিছুই জানেন না নির্বাচনের দিন দায়িত্ব থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে সাংবাদিকদের বাধা দেয়ার ঘটনা নির্বাচন কমিশন স্বীকার করলেও ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ তা অস্বীকার করলো। বুধবার ঢাকা বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে শুনানিতে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৮ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি বা তাদের উপর হামলা করা হয়েছে এমন ঘটনা জানে না পুলিশ কর্মকর্তারা।তদন্ত কমিটির কাছে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিন কোনো সাংবাদিক ভিকটিম হয়েছে এ ব্যাপারে তাদের কাছে কেউ কোন প্রকার অভিযোগ করেননি। তাই তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না।বৈঠকে উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের উপর হামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকায় যেসব ছবি ছাপা হয়েছে তা আসলে সেই দিনেরই ছবি কি না সে বিষয়েও সন্দেহ আছে।নির্বাচনের দিন ঢাকা দক্ষিণে কবি নজরুল কলেজে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত সাংবাদিক ইন্দ্রজিৎ ঘোষনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ পরিদর্শক বলেন, আমার থানায় কিছু হলে সেটা ওসি হিসেবে আমাকে জানানো উচিত। ভোটের দিন কেউ হামলার শিকার হয়েছে এমন কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ করেনি। এমনকি নির্বাচনের দিন আমার থানায় কোন কোন কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে সেটা আমি আজকে (বুধবার) এখানে এসে জানলাম।অথচ ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের দিন এসব কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়ায় কমিশন থেকে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম নিজে ফোন করে পুলিশ কমিশনারকে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপরও অধিকাংশ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়নি সেদিনের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা। এছাড়া সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়ার ঘটনা সেদিন বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সরাসরি প্রচারও করা হয়েছে বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।এর আগে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির কাছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তারাও সেই দিনের ঘটনা ‘স্বাভাবিক’ ছিলো বলে বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে প্রকৃত ঘটনা চাপা থাকছে বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও ইসির উপ-সচিব আব্দুল ওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে ১৭ প্রিজাইডিং অফিসারদের শুনানি হয়েছে। আজ (বুধবার) পুলিশ কর্মকর্তাদের শুনানি হলো। ২৪ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পর্যবেক্ষকদের এবং ২৮ মে সাংবাদিকদের শুনানি হবে একই স্থানে।বুধবার শুনানিতে অংশ নেন- বনানী, সবুজবাগ, ওয়ারী, পল্টন, শাজাহানপুর, যাত্রাবাড়ি, শাহআলী, লালবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক এবং ১২ জন পুলিশ উপ-পরিদর্শক।উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন কালে সাংবাদিকরা পুলিশের বাধা এবং হামলার শিকার হন। বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইনে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে ইসি ঘটনা জানার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তারই অংশ হিসেবে এ শুনানি চলছে।এইচএস/আরএস
Advertisement