‘নিজ জিম্মায়’ যাওয়ার আবেদন করেছেন ১৯ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পর যশোরের অভয়নগর থেকে উদ্ধার হওয়া কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার।
Advertisement
১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৩টায় তাকে আদালতে নেয়া হয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আহসান হাবিবের আদালতে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হচ্ছে।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম এস্ এম মাসুদ জামানের আদালতে ‘নিজ জিম্মায়’ যাওয়ার আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, জয়নাল আবেদিন মেজবাহ, জিয়াউদ্দিন জিয়ার মাধ্যমে ফরহাদ মজহার এ আবেদন করেন।
ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার রাতে স্ত্রী ফরিদা আক্তার বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৪। এর আগে তিনি জিডি করেছিলেন। জিডি নং- ১০১।
Advertisement
ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার এবং পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার আমাদের জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধরে চোখ বেঁধে একটি সাদা মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়।’
তিনি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, না কি ফোন করে তাকে বাসার বাইরে আনা হয়েছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (ফরহাদ মজহার) আমাদের জানিয়েছেন, ওষুধ কেনার জন্য তিনি বাসা থেকে বের হন। তাকে কেউ ফোন করেননি। বাসা থেকে বের হওয়ার পরই তাকে জোর করে অপহরণ করা হয়।’
স্ত্রীর দায়ের করা ‘অপহরণ’ মামলা প্রসঙ্গে আব্দুল বাতেন বলেন, অপহরণ মামলার বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও জানান, নিখোঁজের পর উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত- পুরো বিষয়টি জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এ কারণে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেয়া হচ্ছে।
Advertisement
সোমবার রাতে যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার সকালে তাকে নেয়া হয় আদাবর থানায়। সেখান থেকে তেজগাঁওয়ের ডিসি কার্যালয়ে নেয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পরে তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে।
বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফরহাদ মজহারকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আদাবর থানায় এ সংক্রান্ত একটি অপহরণ মামলা হয়েছে বলে ডিসি বিপ্লব জানালেও পরিবার দাবি করছে, তারা এখনো কোনো মামলা দায়ের করেনি। শুধু লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
সোমবার ভোরে শ্যামলীর রিং রোড ১ নং হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীকে মোবাইলে ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ বার ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ট্রাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে।
তবে কিভাবে তিনি যশোর পৌঁছালেন বা কারা তাকে সেখানে নিয়ে গেছে সে সব বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়।
ঠিক কি কারণে ফরহাদ মজহার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন- জাগো নিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের এডিসি ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, সে বিষয়ে জানতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে তার সঙ্গে ছোট একটি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগে মোবাইলের চার্জার ও শার্টও ছিল। এ থেকে অনুমান করা যায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
জেএ/এমএআর/এমএস