আন্তর্জাতিক

এ কেমন নিষ্ঠুরতা!

শিশু চুরির অভিযোগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানসিক প্রতিবন্ধী এক নারীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা সুস্থ মানুষের বিবেককে নাড়িয়ে দেবে। ট্রাক্টরের স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে তাকে বেঁধে চুল কেটে, পিটিয়ে রক্তাক্ত করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি উত্তেজিত জনতা। শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুর নির্মমতার কাছে হার মেনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন প্রতিবন্ধী ওই নারী।

Advertisement

নিহত মানসিক প্রতিবন্ধী ওই নারীর নাম ওতেরা বিবি। বয়স ৪২ বছর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি। গ্রামের বাড়ি থেকে একটু দূরে মঙ্গলবার নির্মমতার কাছে হেরে গেছেন তিনি।

স্থানীয় একটি গ্রামের কাঠের বাজারে ওতেরা বিবিকে আটক করা হয়। গ্রামের বাসিন্দা দিলিপ ঘোষ নামের এক ব্যক্তি তার ১০ বছর বয়সী মেয়েকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ এনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা ওতেরা বিবির ওপর হামলা চালায়। তারা ওতেরাকে ট্রাক্টরের ওপর টেনে নিয়ে স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে বেঁধে নির্মম নিপীড়ন চালায়। এরপরও ক্ষ্যান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা; তিন ঘণ্টা ধরে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়; বিবিকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয় পাথর।

টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেলা হয় তার শরীরের কাপড়; নির্দয়ভাবে পেটাতে পেটাতে ন্যাড়া করে দেয়া হয় তাকে- বলেন মিথিপুর পানাগর গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীরা।

Advertisement

ওতেরা নিজেকে নিষ্পাপ হিসেবে বুঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি কী বলছেন তা বুঝতে ব্যর্থ হয় উত্তেজিত জনতা। ওইদিন বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওতেরাকে জাঙ্গিপুর সাব ডিভিশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলায় আক্রান্ত ওতেরা মৃত্যুর কাছে হেরে যান।

মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ বলেন, গুজব ছড়িয়ে দেয়ার পর উত্তেজিত একদল জনতা ওই নারীকে পেটায়। গ্রাম থেকে শিশু অপহরণের চেষ্টা করেছেন বলে গুজব ছড়ানো হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ খুনের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছি। গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যায় অভিযুক্তদের সনাক্তের চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে আটক করলেও কারো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত হত্যার অভিযোগ আনেনি পুলিশ।

স্থানীয়দের ধারণা, ওতেরা শিশু অপহরণকারী। গত মাসে একই গ্রাম থেকে একটি শিশু হারিয়ে যায়। তবে ওতেরার স্বামী বলছেন, তার স্ত্রী মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। প্রথমে তার নিখোঁজের সংবাদ শুনে পরিবারের কেউই উদ্বিগ্ন ছিল না। সে প্রায়ই বাড়ি থেকে এক অথবা দুদিনের জন্য উধাও হতো।

Advertisement

সূত্র : ডেইলি মেইল।

এসআইএস/আরআইপি