দেশজুড়ে

রাঙামাটিতে ফের পাহাড়ধস

বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে আবার পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাতদিন থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সোমবার নতুন করে পাহাড়ধস শুরু হয়েছে। এতে আবারও পাহাড়ধসের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন অনেকে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

Advertisement

প্রশাসন থেকে সতর্কতা জারি করে পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসাবাসকারী লোকজনকে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্র বা যে কোনো নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন জায়গায় আবারও পাহাড়ধসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভারি বৃষ্টিতে আবার যে কোনো মুহূর্তে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর থেকে সতর্কতার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী শহরসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য সতর্ককতা জারি করে তাদেরকে দ্রুত নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে। এ জন্য রোববার রাত থেকে শহরে মাইকিং করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভিটাবাড়ি গিয়ে অবস্থান নিয়েছে তাদেরকেও দ্রুত কেন্দ্রে ফিরতে বলা হচ্ছে। এ মুহূর্তে কাউকে বিধ্বস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ভিটায় যেতে দেয়া হচ্ছে না। এজন্য নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। কিন্তু এরপরও আদেশ অমান্য করে যারা গোপনে নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ ভিটায় চলে গেছে তাদেরকে প্রয়োজনে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে বাধ্য করা হবে।

Advertisement

জানা গেছে, অব্যাহত বৃষ্টিতে সদরের ভেদভেদী, শিমুলতলী, মানিকছড়ি, ধেপ্পোছড়ি, সাপছড়ি, শালবনসহ বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের ধস বা বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন জানান, সোমবার সকালে সদরের মানিকছড়ি, ধেপ্পোছড়ি ও সাপছড়িতে পাহাড় ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর মাটি ও গাছ উপড়ে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়ে। পরে অপসারণ কাজ করে রাস্তা সচল করা হয়েছে। অনেক স্থান ঝুঁকির মধ্যে।

সোমবার বিকালে শহরের ভেদভেদীর বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র) ভবনের আশ্রয় কেন্দ্র গিয়ে দেখা যায়, ফের পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়ায় কয়েক দিন আগে ছেড়ে যাওয়া লোকজন আবার কেন্দ্রে ফিরছেন।

কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী পশ্চিম মুসলিমপাড়ার নরুন্নবীর স্ত্রী হালিমা বেগম (৩০), নাজমা (২৬), সেলিনা বেগম (২৮), নুরজাহান বেগমসহ (৩৮) কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, তিনদিন আগে কেন্দ্র ছেড়ে গেছেন ভাঙা ভিটাবাড়িতে। কিন্তু বৃষ্টিতে ভাঙন দেখা দেয়ায় রোববার আবার গিয়ে ওঠেন বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রে। অনেকে আছেন দিনের বেলা নিজেদের ভিটায় থাকেন, কিন্তু আতঙ্কে রাতে গিয়ে ওঠেন আশ্রয় কেন্দ্রে। এ আশঙ্কায় অন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও ছুটছে অনেকে। যারা চলে গেছেন তারাও ফিরছেন।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত জানান, ১৩ জুন পাহাড়ধসের পর শহরে খোলা ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রের সবগুলো এখনও চালু রাখা হয়েছে।

বসতবাড়ির মায়ায় ঝুঁকিতেও কেউ কেউ ভাঙা ভিটাবাড়িতে থাকছেন। শহরের ভেদভেদীর সিঅ্যান্ডবি কলোনির পাশে পাহাড় ধসে ভেঙে যাওয়া ভিটাবাড়িতে অবস্থান করছেন রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৮) ও ইকবাল হোসেনের স্ত্রী জেসমিন বেগম (৩০)।

সোমবার বিকেলে তারা জানান, চারপাশে পাহাড় ধসে তাদের ভিটাবাড়ি এখন ঝুলে আছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলে যে কোনো মুহূর্তে ধসে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তারা দিনের বেলা থাকেন ভিটাবাড়ি আর রাতে যান পাশের বিএডিসি ভবনের আশ্রয় কেন্দ্রে।

বিএডিসি ভবন আশ্রয় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো. রমজান জানান, কয়েক দিন বৃষ্টি কম থাকায় বেশকিছু পরিবারের মানুষ নিজেদের ভিটাবাড়ি চলে গেছেন। কেন্দ্রে শুরু থেকে ওঠা ৯৯ পরিবারের মধ্যে অনেকে চলে যাওয়ায় ৭২ পরিবারের ৩৪৭ জন ছিলেন। আবার পাহাড়ধসের আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় চলে যাওয়া লোকজন সোমবার সকাল থেকে কেন্দ্রে ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ নতুন করেও আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/আরএআর/আরআইপি