বিশেষ প্রতিবেদন

ককপিটের দরজা লাগিয়ে শপিং : ‘অবাস্তব’ বললেন পাইলট

ককপিটের দরজা লাগিয়ে যাত্রীবোঝাই একটি ফ্লাইট ফেলে ব্যক্তিগত কেনাকাটা করতে ডিউটি ফ্রি শপে (শুল্কমুক্ত বিপণি) গিয়েছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুই পাইলট। গত ২২ এপ্রিল ব্যাংককের সুবর্নভূমি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিমানের বিজি-০৮৯ ফ্লাইটে এমন ঘটনার অভিযোগে তদন্ত করছে কমিটি।

Advertisement

ওই দুই পাইলটের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সময় বিমানের এপিইউ (অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট) সচল ছিল। চালু ছিল ইঞ্জিনসহ বিমানের সবগুলো অংশ। চিফ পার্সারের নেতৃত্বে কেবিন ক্রুরা ব্যস্ত ছিলেন যাত্রীদের আসন বসানোর কাজে। কিন্তু ছিলেন না ফ্লাইটের মূল কমান্ডিং অফিসার দুই পাইলট।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, কোনো ফ্লাইটের এপিইউ চালু থাকা অবস্থায় অবশ্যই ককপিটে পাইলটকে বসে থাকতে হবে। এছাড়া ফ্লাইটের ভেতরে যাত্রী ছিলেন। যেকোনো সময় বিমানে আগুন লাগতে পারত অথবা অন্য কোনো নিরাপত্তাজনিত দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এ অবস্থায় ককপিটে পাইলট না থাকলে কে সামাল দিত উড়োজাহাজ?

এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সুইচ থাকে ককপিটে। ফ্লাইটের নিচে থাকা গ্রাউন্ড সার্ভিস বিভাগের মেকানিকদের সার্বক্ষণিক ওয়্যারলেসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। এমন অবস্থায় ককপিটে পাইলট না থাকলে, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

Advertisement

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট পাইলট ক্যাপ্টেন মো. তারিকুল আমিন। ২২ এপ্রিল ব্যাংককে ককপিটের দরজা লাগিয়ে যাত্রীবোঝাই ফ্লাইট ফেলে ব্যক্তিগত কেনাকাটায় ডিউটি ফ্রি শপে যাওয়ার বিষয়টি ‘অবাস্তব’ উল্লেখ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, গ্রাউন্ড টাইমে অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট- এপিইউ সচল রাখার কোনো সুযোগ নেই। সুবর্নভূমি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এপিইউ সচল রাখলে বিমানকে তাৎক্ষণিক জরিমানা করা হয়। কিন্তু ওইদিন বাংলাদেশ বিমানকে কোনো জরিমানা গুনতে হয়নি।’

নিয়ম অনুযায়ী ওই বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড টাইমে প্রতিটি এয়ারক্রাফটকে এপিইউ বন্ধ রাখতে হয়। এপিইউ বন্ধ না রাখলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে জরিমানা করে স্থানীয় সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। ওইদিন বিমানকে কোনো প্রকার জরিমানা করা হয়নি। এতেই বোঝা যায় এপিইউ বন্ধ ছিল। এছাড়া সুবর্নভূমি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ল্যান্ডিংয়ের পর সেখানকার গ্রাউন্ড সাপোর্টের দায়িত্বরতরাই এপিইউ বন্ধ করে তাদের সাপোর্ট দেন।

প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিলের ওই ঘটনার তদন্তে বিমানের সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে কমিটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছে।

এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজেকে বলেন, আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ব্যাংককের সুবর্নভূমি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের প্রচলিত গ্রাউন্ড ও ইকুইপমেন্টস সার্ভিস সাপোর্টের নিয়মগুলো মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। এ সময় এর চেয়ে বেশিকিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

Advertisement

বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল হাসান ইমাম বলেন, এয়ারক্রাফটের টেকনিক্যাল বিষয়ে মন্তব্য করতে ও লিখতে অবশ্যই এ বিষয়ে এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। এয়ারক্রাফট টেকনিক্যাল সিস্টেমের বাইরে চালানো যায় না। এখানে চাইলেও এর বাইরে যাওয়া যায় না।

জানতে চাইলে বিমানের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের চিফ শোয়েব চৌধুরী বলেন, এয়ারক্রাফটে যা কিছু ঘটে এর সবকিছুর জন্য জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক। ককপিটের দরজা লাগিয়ে যাত্রীবোঝাই একটি ফ্লাইট ফেলে ব্যক্তিগত কেনাকাটা করতে ডিউটি ফ্রি শপে গিয়েছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুই পাইলট। তখন উড়োজাহাজটির অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট- এপিইউ সচল থাকার কথা না।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি ওই এয়ারক্রাফটে ছিলাম। ককপিট ক্রুরা নিয়মানুযায়ী গ্রাইন্ড টাইমে ককপিটে থাকবেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ৫/১০ মিনিট এ নিয়মের ব্যতিক্রমও ঘটতে পারে। ২২ এপ্রিলের ওই ঘটনার পর ২৭ এপ্রিল বিমানের এমডি ও সিইও’র অনুমতিক্রমে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্লাইটটি অন ডট এরাইভাল ও অন ডট ডিপার্চারই নয় বরং সাত মিনিট আগে টেক অফ করে।

এ বিষয়ে বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন তারিকুল আমিন বলেছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই একজন পাইলটের প্রধান কাজ। এটি সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সেদিন ঢাকার ওয়েদার ছিল প্রতিকূলে। এয়ারক্রাফটের ভেতরে ইন্টারনেটের সিগনাল দুর্বল হওয়ায় নেট পেতে বোর্ডিং ব্রিজের প্রান্তে যাওয়া লেগেছে। ঘটনা এতটুকুই। দু`মাস পর এ নিয়ে কল্পকাহিনী শুনে আমি হতবাক।

এদিকে বিমানের ফ্লাইট অপারেশন সূত্র জানিয়েছে, এই আলোচনা জন্মের আগে বিমানে যোগদানের পর থেকে ক্যাপ্টেন তারিকুল আমিনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে (জাতীয় প্রয়োজন) গত হজ মৌসুমে বিমানের ইতিহাসে প্রথম টানা ৩০ ঘণ্টা ঢাকা-আবুধাবি-জেদ্দা, জেদ্দা-আবুধাবি-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মতো সফল ও সাহসী ভূমিকা রয়েছে তার।

২২ এপ্রিল বিমান পারিচালনায় কোনো গাফিলতি হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, এ কারণে এখন এ বিষয়ে বেশিকিছু বলতে চাই না।

আরএম/এমএআর/এসআর