দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। এখন বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃতির ওপর নির্বিচার অত্যাচার, নদী-খাল দখল হয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ কারণে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে অধিকাংশ নদ-নদী। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যা দেখা দিচ্ছে।
Advertisement
এরই মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। সিলেট ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ফলে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বাড়ছে পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি। রংপুরে তিস্তার পানি বিপত্সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে প্রতিদিনই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। নদ-নদীতে পানি বাড়ছে, দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। পানিবন্দি মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। এছাড়া ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এ নগরীর মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নদী-খাল দখল বন্ধ করতে হবে। ইতোপূর্বে ঢাকার চারপাশের নদী বাঁচানোর জন্য হাইকোর্টকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিন্তু দখল বন্ধ হচ্ছে না। একদিকে উচ্ছেদ অভিযান চলে অন্যদিকে নতুন করে দখল হয়। এই সাপলুডু খেলায় শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় দখলকারীরাই। অথচ নদী দখল বন্ধ করতে না পারলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে নদীর অপমৃত্যু হবে আর সকলে চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা হতে পারে না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া নদী দখল বন্ধ করা যাবে না। নদী দখলে একটি দুষ্টচক্র অত্যন্ত ক্রিয়াশীল। এ চক্র ভাঙতে হবে। প্রশাসনের কোন গাফিলতি থাকলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদীমাতৃক বাংলাদেশকে তার আপন মহিমায় দেখতে চাই।
এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিতে হবে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্যা চলে যাওয়ার পর যে সমস্ত রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দেয় সেগুলোর ব্যাপারেও নিতে হবে আগাম প্রস্তুতি। বন্যার কারণে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ উছিলায় নিত্যপণ্যের দাম যেন না বাড়ে সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
Advertisement
এইচআর/জেআইএম