মানসিক অসুস্থতার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণ করতে প্রতিনিধি পরিষদ কংগ্রেসে উপস্থাপিত একটি বিলে সমর্থন দিয়েছে দেশটির বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটের অন্তত ২৫ সদস্য। মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা মানসিক অসুস্থতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিতে হবে তাকে।
Advertisement
কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য জেমি রাসকিন বিলটি উপস্থাপন করেছেন। কংগ্রেসে আনা এই বিলের ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা ও সক্ষমতা যাচাইয়ে ১১ সদস্যের একটি প্যানেল গঠন করা হবে। প্যানেলের অধিকাংশ সদস্যই থাকবেন চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
এছাড়া প্যানেলে দেশটির সাবেক উচ্চপদস্থ দুই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও থাকবেন। এই দুই সদস্যের মধ্যে সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলও থাকতে পারেন। মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট শারীরিক অথবা মানসিকভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম কিনা মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে তা ঠিক করবেন প্যানেলের সদস্যরা।
মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ওপর ভিত্তি করে প্রেসিডেন্টের শারীরিক অসুস্থতা প্রমাণের পদক্ষেপ নিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্যরা।
Advertisement
বেশ চাঞ্চল্যকর এ পদক্ষেপের পক্ষে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী আইনি সহায়ক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিলটির উপস্থাপক রাসকিন। ১৯৬৭ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট জনএফ কেনেডির গুপ্তহত্যার পর ওই সংশোধনী আনা হয়। প্রেসিডেন্ট কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যাবে সে প্রক্রিয়া যুক্ত করা হয় ওই সংশোধনীতে।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, রাসকিনের আনা ওই প্রস্তাবে গত বৃহস্পতিবার অন্তত দুই ডজন ডেমোক্র্যাট সদস্য সাক্ষর করেছেন। কংগ্রেসের অধিকাংশ সদস্য এই বিলে সমর্থন দিলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাবেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে প্রেসিডেন্টের শারীরিক সক্ষমতা মূল্যায়নে ভাইস প্রেসিডেন্টকেও একমত পোষণ করতে হবে।
তবে কংগ্রেসে ওই বিল পাস হলে এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে অপসারণে প্যানেলের ওই মূল্যায়ন বাস্তবায়নে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যেরও সমর্থন প্রয়োজন হবে। যদি দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন না পাওয়া যায় তাহলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না।
কংগ্রেসে উপস্থাপিত বিলের বিষয়ে মন্তব্য জানতে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিএনএন যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পায়নি।
Advertisement
গত ডিসেম্বরে মার্কিন নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত তিন মনোবিজ্ঞানী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে ট্রাম্পের মানসিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপকরা নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পূর্ণ চিকিৎসা ও স্নায়ুবিক মনোরোগ মূল্যায়ন’ এ নির্দেশ দিতে বারাক ওবামার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট মনরোগ বিশেষজ্ঞদের একটি গ্রুপ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ট্রাম্পের ‘বিপজ্জনক মানসিক অসুস্থতা’র লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশ পরিচালনায় ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করেন তারা।
সেই সময় মনোবিজ্ঞানী জন ডি. গার্টনার বলেন, ট্রাম্প মানসিকভাবে ভয়াবহ অসুস্থ এবং মানসিক দিক থেকে প্রেসিডেন্টের অযোগ্য তিনি। ট্রাম্পের মাঝে ‘মারাত্মক আত্মমগ্নতা’র লক্ষণ দেখা গেছে। যা অসামাজিক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি, আগ্রাসন ও অন্যের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যৌনসুখলাভের মতো মানসিক বিকারগ্রস্ততার প্রকাশ ঘটায়।
কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনের ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের এই অধ্যাপক বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপজ্জনক মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
সূত্র : সিএনএন।
এসআইএস/জেআইএম